শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর চতুর্থ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত

চবি প্রতিনিধি 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (১২ আগস্ট ২০২৫) বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, চবি শাখার উদ্যোগে ৪র্থ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা ও সমাধান নিয়ে ১৪ দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ক্যাম্পাসে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা, আবাসন সংকট নিরসন, শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন, খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা, আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ, এবং অবৈধ দখলমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা বলেন , ” এখন সময় এসেছে এই প্রশাসনকে প্রশ্ন করার প্রশাসন কি নির্দিষ্ট একটি গুপ্ত বা সুপ্ত গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে নাকি , বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর সাধারণ শিক্ষার্থীর যে চাওয়া পাওয়া আকাঙ্খা সেটি বাস্তবায়ন করবে?? আওয়ামী অপশাসনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন শেখ হাসিনার আমলেও আমরা প্রকাশ্যে রাজনীতি করেছি, তার পেটোয়া গুন্ডা বাহিনীর হাতে মার খেয়েছি কিন্তু আমরা কখনো আপোষ করিনি ‌। হল আমার অধিকার, আমি কেন কোন রাজনৈতিক নেতার পা চেটে আমার হলের একটি সিট আদায় করব?? এটি প্রশাসন আমাকে বুঝিয়ে দেবে এটি আমার ন্যায্য দাবি।
ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাবেক নেতা ডা. হারুন অর রশিদ বলেন এই সরকার মার্কিনীদের দালালি করছে । পরিস্থিতির একটুও পরিবর্তন হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যেমন আমরা ভারতের সাথে তাদের মন রক্ষার জন্য যেমন গোপন চুক্তি করেছে ঠিক তেমনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার পায়তারা করছে । তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন , ” এটা বীর চট্টলা , এখানকার মানুষ যখন জাগবে তখন কিন্তু এখান থেকে এক একজন ক্ষুদিরাম এক একজন প্রীতিলতা জন্ম নিবে । বিপ্লবীদের কখনো মরণ হয় না , তারা ফিরে আসে বারবার ‌। “
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এর সংগঠক মাইকেল চাকমা বলেন , ” ক্ষমতার বড়াই করবেন না, একদিন এই দেশে স্বৈরাচারী শাসক হাসিনা ও ক্ষমতার বড়াই দেখাতো কিন্তু তার শেষ পরিণতি আমরা সবাই জানি । আপনারা যে নতুন বাংলাদেশ , ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন এক বছর পর এসে জনগণ বুঝতে পারছে আপনারা শুধুমাত্র এটিকে মুখের কথার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রেখেছেন বাস্তবে আমরা তার কোন প্রয়োগ দেখিনি ‌। তা না হলে এখনো কেন আমাদের শ্রমিক ভাইয়েরা বেতন চাইতে গেলে তাদের উপর ওই ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমলের মত গুলি চলবে, কিংবা পাহাড়ে কেন সেনাবাহিনী নির্বিচারে আমার ছোট ভাইদের হত্যা করবে , কই আপনারা কেউ তো এসবের বিচার করলেন না??
কেন্দ্রীয় বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায় বলেন ,” এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জুলাইয়ের যে মূলমন্ত্র ছিল সেটি ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ‌। গত জুলাইয়ে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার , কিন্তু এক বছর পর এসে আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পাচ্ছি । তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন , ” সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছিল একটি প্রতি বিপ্লব সংঘটিত হতে পারে, আওয়ামী লীগ নাকি ফিরে আসবে । হ্যাঁ আওয়ামী লীগ ঠিকই ফিরে এসেছে কিন্তু সেটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘাড়ের ভূত হয়ে । তাদের কাজকর্মের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ফিরে এসেছে । আমরা দেখেছি ফ্যাসিস্টের আমলে যেভাবে একজন শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার জন্য তাদের রাস্তায় নামতে হতো ঠিক সেভাবেই কিছুদিন পূর্বে আমার ভাইয়েরা আশুলিয়াতে আন্দোলন করলে পুলিশ তাদের উপর নির্বিচারে হামলা করে । তিনি ছাত্র শিবিরের গুপ্ত রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন ,” বুঝলাম তখন না হয় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার ছিল তাই তাদের গুপ্ত রাজনীতির প্রয়োজন ছিল কিন্তু ২৪ শে আন্দোলনের পর তো পরিস্থিতি বদলেছে তাহলে কেন তারা এখনো গুপ্ত রাজনীতি করে?? এক্ষেত্রে কি তাহলে তারা আওয়ামী লীগের মতই ফ্যাসিবাদী রাজনীতির অন্য একটি ধারা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ কায়েম করছে না , তারা একই মুদ্রার এপিঠ এবং ওপিঠ । এভাবেই তারা আওয়ামী লীগকে তাদের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে । যদি কেউ নব্য ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করতে চায় তবে বাংলাদেশের মানুষ আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে এবং সর্বস্তরের জনগণ মিলে তা রুখে দেওয়া হবে । “
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জসিম উদ্দিন জাকির, আহ্বায়ক বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী চবি শাখা এবং উদ্বোধন করেন মাইকেল চাকমা, সংগঠক , ইউপিডিএফ ।

সর্বাধিক পঠিত