দুর্নীতির আতুড়ঘর কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগ; প্রকল্পের ৩০ পার্সেন্ট যায় ডিপোর পকেটে!

বশিরুজ্জামান, ঈদগাঁও
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগে বিভিন্ন কাজের নামে চলছে হরিলুট ও লুটপাট। কাজ না করে কোটি কোটি টাকা পকেটস্থ করছেন ডিএফও ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন দশ রেঞ্জ ও অন্তত ৪০টি বন বিটে রোহিঙ্গাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনঃ বনায়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে- টেকনাফ রেঞ্জ, হোয়াইকং রেঞ্জ, শিলখালি রেঞ্জ, উখিয়া রেঞ্জ, কক্সবাজার রেঞ্জ, রাজারকুল রেঞ্জ, ধোয়াপালং রেঞ্জ, পানেরছড়া বিট, তুলাবাগান রেঞ্জ ও খুনিয়াপালং বিটে প্রায় ২৫০০ হেক্টর জঙ্গল পরিষ্কার না করে ফাঁকে ফাঁকে চারা লাগানোর কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট রেঞ্জার এবং বিট অফিসারগণ। এসব বাগান সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পুরো জায়গাতে প্রায় ৫০ শতাংশ বাগান আগেই ছিল এবং সেসব গাছ কিছু কিছু কাটা হচ্ছে, আবার কিছু কাটা হয়নি এবং বিদ্যমান যেসব বনায়নের জায়গা ফাঁকা আছে শুধুমাত্র সে সব ফাঁকা জায়গার মধ্যেই চারা লাগিয়ে ভাসানচর প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ নুরুল ইসলাম।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাগানের বরাদ্দ না পেয়েও মাঠ পর্যায়ে নার্সারি উত্তোলন কাজ স্ব-স্ব রেঞ্জ কর্মকর্তাদের দিয়ে করিয়ে নেন। পরে সেই বরাদ্দের শতকরা ৩০ শতাংশ ভাগ হারে টেন্ডার আইটেমসহ প্রায় সাড়ে সাত কোটি চারা উত্তোলনের বরাদ্দ বাবদ প্রায় ৭৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা আলোচ্য কর্মকর্তাগণের নামে চেক ইস্যু করে হাতিয়ে নেন, এটি বন বিভাগে প্রচলিত পার্সেন্টেজ প্রথার চেয়েও অনেক বেশি। এর কারণ হিসেবে তিনি উপরের দিকে ইঙ্গিত করে থাকেন।
তিনি বোঝাতে চান উপর মহলেও এই টাকার ভাগ যায়! এছাড়াও বাগানে আকাশমনি প্রজাতির চারা লাগানোর বিষয়ে বর্তমান সরকারে উপদেষ্টার কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তিনি এ ব্যাপারে হেল্প প্রকল্পের পিডি এবং হাই অফিসিয়ালদের ম্যানেজ করে নেবেন বলে একাধিক গোপন সূত্রে জানা যায়। বনকর্মী ও সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের অধীন ভাসানচরে সবুজ বেষ্টনী স্থাপন এবং রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পূর্ণ বনায়ন প্রকল্পের আওতায় বিগত ৯ মার্চ ২০২৪ সালে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে। বিজ্ঞপ্তিতে প্রকল্পের নার্সারি কাজের জন্য পলি প্রোফাইলিন ব্যাগ, মাটি, রাসায়নিক সারসহ বৃক্ষ রোপনের জন্য উপকরণ সরবরাহের দরপত্র আহবান করা হয়। ডিএফও নুরুল ইসলাম তার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে হরিলুট ও লুটপাটে দিয়ে অতি সুকৌশলে এই টেন্ডারের অনুমোদন দিয়ে দেন। অথচ নারকেল বীজসহ অন্য সকল মালামালের কোন প্রকার চিহ্ন বা অস্তিত্ব কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দক্ষিণ বন বিভাগে দশ রেঞ্জের কোথাও ১০ টি নারকেল বীজও একত্রে দেখা যাবেনা। কিন্তু ডিএফও টেন্ডারে এসব ঠিকই দেখিয়েছেন এবং মিলেমিশে টাকার ভাগবাটোয়ারা করেছেন। চলতি বছরের মে মাসে টাকা ভাগাভাগির উদ্দেশ্যে জনৈক ঠিকাদার টেন্ডার আইটেমের জন্য মালপত্র না দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা নগদ নিয়ে বিভাগীয় কার্যালয়ে প্রধান সহকারীর কাছে জমা দিতে যায়, এসময় বন বিভাগে কর্মরত হিসাবরক্ষক জনৈক রাসেলের সাথে মারামারি ও হাতাহাতি হয়, পরে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিষয়টি ধামাচাপা দেন। জানা গেছে- ঠিকাদারের কাছ থেকে মালামাল বুঝে না নিয়ে শুধুমাত্র কাগজপত্রে বুঝে পেয়েই নার্সারি উত্তোলনের কার্যক্রমের বৈধতা দেন ডিএফও নুরুল ইসলাম। শুধুমাত্র নার্সারি উত্তোলন থেকেই ডিএফও হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় ২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। তার এ টাকা সংগ্রহ ও পাচার কাজে টিএম আলী নেওয়াজ নামে একজন ফরেস্টার সহযোগিতা করছেন। এদিকে টেন্ডার আইটেমে মাটি সংগ্রহের কথা থাকলেও প্রতিটি জায়গায় পাহাড় কেটে নার্সারির মাটি জোগাড় করা হয়েছে। সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বাগান পরিস্কার না করেই লাগানো হচ্ছে আকাশ মনি চারা গাছ। এবং মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন ছাড়াই নার্সারি ও বাগানের মালামাল ঠিকাদারের কাছ থেকে সরেজমিনে বুঝে না নিয়ে আরো প্রায় ১০০ কোটি টাকা চলতি জুন মাসে হাতিয়ে নিতে ব্যস্ত ডিএফও। এব্যাপারে ডিএফও মো: নুরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।