প্রিন্ট এর তারিখঃ ডিসেম্বর ১, ২০২৫, ১২:৫৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ নভেম্বর ২, ২০২৫, ১০:৫৫ অপরাহ্ণ
অনঁরা কি এমপি অঁইবান? নাকি নমস্কার দিতা ভান্তের ডইল, হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, ভান্তে ভান্তে হইবল্লা!
নিজস্ব প্রতিবেদক
টেকনাফ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একটি রাজনৈতিক সভায় তিনি বলেন, “আপনারা কি এমপি হবেন? নাকি নমস্কার দিতা ভান্তার মতো হরে কৃঞ্চ হরে রাম ভান্তা ভান্তা করতে যাবেন।”
ধর্মীয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে প্রদত্ত এই বিদ্রূপাত্মক বক্তব্যটি সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ভাইরাল হলে নিন্দার ঝড় ওঠে। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিশ্লেষকরা বলছেন একজন জনপ্রতিনিধির এমন বক্তব্য সমপ্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্থানীয় রাজনৈতিক পরিবেশকে নড়বড়ে করে দিতে পারে।
জানা গেছে, ওই সভা ছিল জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক ও টেকনাফ–উখিয়া আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী মোঃ আব্দুল্লাহর পক্ষে আয়োজিত এবং চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান আবদুল্লাহর ছোট ভাই। বক্তব্যের ভিডিওটি ভাইরাল হওয়া মাত্রই স্থানীয় অনেকে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন কারণ সময়টি নির্বাচনী প্রচারণার গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। অনেকেই মনে করছেন, বিতর্কটি আব্দুল্লাহর প্রচারণাকে নেতিবাচক প্রভাবিত করতে পারে।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক কানন বড়ুয়া বিশাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে লিখেছেন, “চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানের উচিত হিন্দু ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। তাঁর বক্তব্য ধানের শীষের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করেছে।”
উখিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য বিপিএল পলাশ লিখেছেন, “দলে যদি আবদুল্লাহ ভাইকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, আমরা ভোট দেব। কিন্তু অন্য ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করা দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর। একজন জনপ্রতিনিধির কাছে সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা থাকা উচিত।”
সনাতন সম্প্রদায়ের বহু ব্যক্তি ও সংগঠন ফেসবুকে পোস্ট করে ওই মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন টেকনাফ–উখিয়া আসনটি আগামী নির্বাচনে বিএনপির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এপর্যায়ে দলের একজন জনপ্রতিনিধির এমন বিতর্কাত্মক মন্তব্য দ্বন্দ্ব এবং বিভাজনের সৃষ্টি করতে পারে, ফলাফলশীলভাবে ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া বাড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেন, দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতাহীন বক্তব্য যদি দ্রুত প্রশমিত না করা হয়, তাহলে তার প্রভাব পড়তে পারে সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রতিচ্ছবিতে ও সাধারণ নির্বাচনী পরিবেশে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জানান, “আমি ওই ভিডিওটি সম্পর্কে কোনোভাবে অবগত নই, আমার চারপাশে সব সনাতন ধর্মের লোকের বসবাস। ভিডিওটি এআই দিয়ে বানানো হয়েছে কি না জানতে চাওয়া হলে সেটি ভালোভাবে শুনে দেখতে বলেন তিনি।
সম্পাদকীয় মন্তব্য, ধর্মীয় অনুভূতি ও সাম্প্রদায়িক সংবেদনশীলতা নিয়ে কৌতুক বা বিদ্রূপজনক মন্তব্য কোনো নেতারই করা উচিত নয়। জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হলো সব ধর্মের মানুষের প্রতি সমান সম্মান প্রদর্শন করা কারণ নেতৃত্ব কেবল ক্ষমতা নয়, দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাসও বয়ে আনে।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত