ঈদগাঁওতে ড্রেনের মাঝখানে বিদ্যুতের খুঁটি রেখেই চলছে নির্মাণকাজ : দুর্ঘটনার আশংকা!

বশিরুজ্জামান, ঈদগাঁও
ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও বাজারে বিদ্যুতের পনেরোটি খুঁটি ড্রেনের মধ্যখানে রেখেই প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ কাজ দুই-তৃতীয়াংশ শেষ করেছে জনপ্রকৌশল অধিদপ্তর।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ড্রেনের মাঝখানে খুঁটি থাকায় এই ড্রেনটি কোনো কাজেই আসবে না। দুইফুট প্রস্থের ড্রেনে একফুট জায়গা খুঁটির দখলে। ড্রেনের বাকী জায়গায় অল্প বৃষ্টিতেই ময়লা জমে ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। এতে জনদুর্ভোগ কমার চেয়ে আরও বাড়ার সম্ভাবনা বলে মনে করছেন অনেকেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদগাঁও বাজার এলাকায় ডিসি সড়কের গা ঘেঁষে বাসস্টেশনের একটু পর থেকে শুরু করে বঙ্কিম বাজার এলাকা পর্যন্ত ৭০০ মিটার থেকে ৮০০ মিটারের একটি ড্রেন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রায় দুই বছর আগে ড্রেনের কাজ শুরু হলেও পরিপূর্ণ নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি। যতটুকু নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে এতে রয়েছে অভিযোগের বিশাল পাহাড়। প্রায় পনেরোটি বিদ্যুতের খুঁটি ড্রেনের মধ্যখানে রেখেই অর্ধেক কাজ শেষ করেছে কতৃপক্ষ। সেই সাথে অভিযোগ উঠেছে হাজার টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন বিল্ডিংয়ের বাথরুমের পাইপলাইন এই নির্মাণাধীন ড্রেনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমবে পুরো বাজার এলাকায়। ফলে লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতিসহ ব্যবসায়ীদের গুনতে হবে অভাব অনটনের দিন। পথচারীদের হাঁটতে হবে ড্রেনের দুর্গন্ধযুক্ত পচা পানিতে। দুর্ভোগ পোহাতে হবে স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে আসা শিক্ষার্থীদের।
জনপ্রকৌশল অধিদপ্তর মাহমুদুর হাসানের সাথে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ড্রেনের নির্মাণকাজ ২৪ সালের শুরুর দিকে শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য ঈদগাঁও পল্লীবিদ্যুৎ অফিস বরাবর লিখিত চিঠি পাঠানোর একবছর পরও তাদের কোনপ্রকার খুঁটি সরানোর পদক্ষেপ না দেখে ড্রেনের কাজ পুনরায় শুরু করেছি। ড্রেনের মধ্যখানে খুঁটি থাকলেও ড্রেনের পানি চলাচলে কোনপ্রকার বাঁধা হবে না বলে দাবি করছেন তিনি। তিনি বলেন দুইফুট প্রস্তের ড্রেনে একফুট জায়গা যদি খুঁটি হয় বাকী একফুট জায়গা থেকে ঈদগাঁও বাজারের পানি ড্রেন দিয়ে সহজেই নেমে যেতে পারবে।
কক্সবাজার জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ইবনে মায়াজ প্রামাণিকের সাথে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ড্রেনের মধ্যখানে বিদ্যুতের খুঁটি ও টয়লেটের পাইপলাইনের বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। ঈদগাঁও জোনাল অফিসের সাথে সমন্বয় করে আমরা বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর ব্যবস্থা করছি। সেইসাথে ড্রেনের সাথে টয়লেটের লাইন সংযুক্তকারীদের বিষয়েও উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নিচ্ছি বলে আস্বস্ত করেন তিনি।
ঈদগাঁও জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রাজন পালের সাথে এই বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, জনপ্রকৌশল অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর বিষয়ে লিখিত চিঠি পেয়েছি। এবং চিঠি বরাবর পদক্ষেপ নেয়ার মতো ঈদগাঁও বাজারে পরিস্থিতি নেই। এখানকার বাস্তবতাটা এমন ড্রেনের উপর থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর মতো কোনো জায়গা না থাকায় খুঁটিগুলো সরাতে পারিনি। এই পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে হয়তো বিদ্যুতের খুঁটি সরানো সম্ভব হবে।
আবুল কালাম নামের এক বাজার ব্যবসায়ী জানান, ড্রেনের মাঝখানে খুঁটি রেখেই ড্রেন নির্মাণ করায় এই ড্রেন কোনো কাজেই আসবে না। শুধু শুধু সরকারি টাকাগুলো উন্নয়নের নামে অপচয় করছে।
নুরুল হক নামের এক ব্যক্তি জানান, মাঝখানে খুঁটি থাকার কারণে ড্রেনের ময়লা-আবর্জনা সেখানে (খুঁটির স্থানে) আটকে যাবে। এতে পানি আটকে গিয়ে পচা দুর্গন্ধ ছড়াবে। ফলে ভোগান্ত পোহাতে হবে বাজারসহ স্কুল-মাদ্রাসায় আসা সহস্রাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের।
সচেতন মহল জানান, অতিদ্রুত ড্রেনের মাঝখান থেকে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে ঈদগাঁও বাজারকে জলবদ্ধতার হাত থেকে মুক্ত করে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশে বসবাসের উপযুক্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানান।