প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ১২:৪৮ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ৩, ২০২৫, ১:৩২ অপরাহ্ণ
ঈদগাঁওতে মহাসড়কের বুকে গরু-মহিষের বাজার : প্রশাসনের নিরবতা নিয়ে আঙুল তুলছেন সচেতন মহল!
ঈদগাঁও প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার আন্তঃ জেলা মহাসড়ক অবরুদ্ধ করে দ্বীর্ঘ বছর রাজনৈতিক ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের পরিচালনায় চলছে গরু-মহিষের বিশাল গরু বাজার। মহাসড়কের উপর গরু-মহিষের বাজার হওয়ায় প্রতিনিয়ত দ্বীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল। দ্বীর্ঘ যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ঈদ মৌসুমে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা সাধারন বাসযাত্রীদের। দুর্ভোগের শেষ নেই স্থানীয় পথচারী ও শিক্ষার্থীদের।
ঈদগাঁও উপজেলায় অবস্থিত দক্ষিণ চট্টলার বৃহত্তর ঈদগাঁও বাজারে দোকানপাট, শপিংমল, রেষ্টুরেন্ট, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্টান ও ব্যাংক-বীমাসহ প্রায় ৮ হাজারেরও অধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অন্যদিকে বাসস্টেশন ও পার্শবর্তী এলাকায় রয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান। অদূরে ঈদগাঁও থানা। এসবকে ঘিরে গড়ে উঠেছে বৃহৎ আবাসিক এলাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হাট-বাজার (স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা) আইন ২০২৩ ও মহাসড়ক আইন ২০২১ অনুযায়ী সারাদেশে মহাসড়কের উপর কোরবানির হাট বসানো সরকারি বিধি নিষেধ থাকলেও উপজেলার জামায়াতের রুকন নুরুল হুদা, জামায়াত কর্মী চৌফলদন্ডী ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মনজুর আলমের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঈদগাঁও গরু-মহিষের হাট পরিচালনা করছে। তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, ঈদগাঁও গরু বাজারের এ সনের ইজারাদার খরুলিয়ার আব্দু রহিম হলেও রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে আব্দু রহিমের কাছ থেকে কমিশনে ঈদগাঁও বাজারটি সাব-ইজারা নেয় উপজেলা জামায়াতের ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট। অথচ ইজারা চুক্তিপত্রে সাবইজারা দেওয়া যাবেনা বলে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমনকি মহাসড়কের উপরে যানজট সৃষ্টি করে কোরবানি পশুর হাট বসানোরও বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতা থাকার পরেও অবাধে গরু-মহিষের হাট বসানো জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখানোর মতন।
ঈদগাহ্ রশিদ আহমদ ডিগ্রি কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা জানান, গরু বাজারের উপর দিয়ে কলেজে যাতায়াতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় আমাদের। আমরা যারা হেঁটে যাতায়াত করছি তারা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই প্রশাসনের প্রতি আকুল আবেদন গরু বাজার যেন আমাদের যাতায়াতের রাস্তা তথা মহাসড়কের উপর থেকে সরানো হয়।
কোরবানি পশুর হাটের পার্শ্ববর্তী মেহেরঘোনা এলাকার নুরুল আলম ও জসিম উদ্দিন জানান, মহাসড়ক হয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। গরু বাজারটি অন্যত্র সরিয়ে নিতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
গরু ক্রেতা আব্দুল আজিজ বলেন, গতবাজারে ঈদগাঁও গরু বাজার থেকে একটি গরু কিনে ক্রেতার পক্ষে হাসিলের টাকার পরিমান শুনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। পরে তর্কাতর্কিতে আমি ১০০০ টাকা আর যিনি বিক্রি করেছেন তিনি ১৫০০ টাকা হাসিল দিয়ে গরু নিয়ে বাড়ি চলে যায়। অন্যান্য গরু বাজারের তুলনায় এই বাজারের হাসিলের টাকার পরিমান অনেক বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গরু বিক্রেতা নাসির উদ্দীন জানান, ঈদগাঁও বাজার উপজেলার বৃহত্তর বাজার বলে হাট-বাজারের দিন গরু নিয়ে আসি কিন্তু মহাসড়কের উপরে গরু বাজার বসায় গাড়ি হর্ণে গরু লাফালাফি করে ফলে নানান সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়। এত্ত বড় বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার কোনো ধরণের হাসিলের বিলবোর্ড টাঙানো নেই ফলে যে যার মতো হাসিল আদায় করছে যেটা একপ্রকার চাঁদাবাজির মতো।
এ ব্যাপারে বাজারের মূল ইজারাদার আব্দু রহিমকে বেশ কয়েকবার মুটোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, আমরা আগে থেকে অবগত আছি যে মহাসড়কের দুই পাশে পশুর হাট বসানো আইনগত অপরাধ, যেহেতু পশুর হাটের জন্য ঈদগাঁওতে দীর্ঘ যানজট লেগে থাকে তাই আমরা উপজেলা প্রশাসনকে আগে থেকে জানিয়ে রেখেছি, যদি কোনভাবে পশুর হাট রাস্তায় বসানো হয় আমরা প্রশাসনের সহযোগিতায় আইনি পদক্ষেপ নিবো।
এবিষয়ে রামু তুলাতলি হাইওয়ে থানার অফিসার ইনসার্জ নাছির উদ্দিন বলেন, হাইওয়ে সড়কের উপর কোরবানি পশুর হাট বসলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সওজ কক্সবাজার অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ জানান, মহাসড়কের উপর হাট-বাজার বসানোর নিয়ম নেই। যদি কেউ মহাসড়কের উপরে কোনো ধরনের হাট-বাজার বসায় তাহলে সাথে সাথে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও ১২ই মে এক সংবাদ সম্মেলনে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা জানান, ঈদগাঁও গরুর বাজার বিষয়ে আমার কোনো ধরনের বক্তব্য নেই। তবে মহাসড়কের উপর গরু বাজার বসিয়ে যানযট সৃষ্টিসহ সরকারি আইন অমান্য করলে প্রশাসন কতৃক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালা্হউদ্দিনের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি জানান, আগামীকাল সকাল দশটায় কল দেয়ার কথা বলে লাইন কেটে দেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত