চিটাগং ট্রিবিউন ডেস্ক
বশিরুজ্জামান, ঈদগাঁও প্রতিনিধিঃ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সর্ববৃহত ও ব্যস্ততম ঈদগাঁও বাজার। রামু উপজেলার ঈদগড়-বাইশারী থেকে শুরু করে রশিদনগর, ভারুয়াখালী ও চৌফলদন্ডীসহ বৃহত্তর ঈদগাঁও উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের জনসমাগম ঈদগাঁও বাজারে। ঈদগাঁও বাসস্টেশন থেকে বাজারের প্রবেশ মুখে ডিসি সড়কের উপরেই বসা ছাগল বাজারের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। বাজারের প্রধান সড়কের উপরেই ছাগল বেচাকেনা হওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী ও হাসপাতালগামী রোগিরা।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে প্রাচীনকাল থেকে গড়ে উঠা এই বাজারে সময়ের প্রয়োজনে ছাগলের চাহিদা, যোগান ও জনসমাগম বাড়লেও হয়নি ছাগলের হাট বসার মতো সুনির্দিষ্ট জায়গা। প্রতি সপ্তাহে দুইদিন শনিবার ও মঙ্গলবার ডিসি সড়কের উভয় পাশ দখল করে বসে ছাগলের হাট। এতে একদিকে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট অন্যদিকে বন্ধ হয়ে যায় মানুষ চলাচলের রাস্তা।
বিপুল এই জনসমাগম ঈদগাঁও বাজারে বাসস্টেশন থেকে প্রবেশমুখে বাজারের প্রধান সড়ক ডিসি সড়ক দখল করেই ছাগলের হাট বসানোর কারণেই সৃষ্ট হয় যানযট। তীব্র যানযটের ফলে প্রধান সড়ক হয়ে পথচারীদেরও হেঁটে যেতে কষ্ট হয়। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা, পথচারী, স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থী, জরুরি চিকিৎসা সেবা নিতে আসা মুমূর্ষু রোগী ও স্থানীয়রা।
ছাগল বাজার এলাকার ব্যবসায়ী মামুন বলেন, আমরা অনেক টাকা সেলামী ও ভাড়া দিয়ে দোকান নিছি। প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার দোকানের সামনে ডিসি সড়কের উপরে ছাগলের হাট বসায় দোকানে ক্রেতার সমাগম হয় না। ফলে ব্যবসায়ি হিসেবে সপ্তাহে দুদিন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের অনুরোধ ডিসি সড়ক থেকে ছাগল বাজার সরিয়ে অন্যকোনো নির্দিষ্ট স্থানে বসানো হোক।
টমটম চালক সাদেকুর রহমান জানান, বাজার কমিটির অব্যবস্থাপনা ও ছাগল বাজারের কারণে শনিবার ও মঙ্গলবার তীব্র যানজট লেগে থাকে। ফলে গাড়ি নিয়ে ২ মিনিটের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩০ মিনিট। সড়কের উপর ছাগল বেচা-কেনা, পথচারী ও ফুটপাত দখলের কারণে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটে।
ঈদগাহ গ্রামার স্কুল ও ঈদগাহ হাই স্কুলের শিক্ষার্থী নাইমা, রাফিয়া, নাইমুল ও হাসান জানান, স্কুল ছুটি হলে ছাগল বাজার পার হয়ে আমাদের যেতে হয়। বাজারের প্রধান সড়কের উপরে ছাগল বাজার বসানোর ফলে ছাগলের মলমূত্র আমাদের গায়ে এসে পড়ে। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। এতে আমাদের চলাচলে চরম বিপাকে পড়তে হয়।
ঈদগাঁও বাজার ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির প্রচার সম্পাদক সাকলাইন মোস্তাক জানান, ঈদগাঁও বাজারের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাজারের বিভিন্ন গলিতে অটোরিকশা ও টমটম অপরিকল্পিতভাবে দাঁড়িয়ে থাকা, সড়ক দখল করে পশুপাখির ও তরকারির হাট এবং ফুটপাত দখল করে দোকান বসানোয় এখানে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে বাজার এলাকায় তৈরি হয় জনদুর্ভোগ। সমস্যা নিরসনে সচেতন মহল ও প্রশাসনের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান তিনি।
ছাগল বাজার ইজারাদার কতৃপক্ষ জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরেই ডিসি সড়কে ছাগল বাজার বসানো হচ্ছে। কোনোদিন কোন সমস্যা হয়নি। ইদানীং দোকানদারসহ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখলে থাকার কারণে আমাদের রাস্তার পাশে নেমে আসতে হয়েছে। ২৫ লক্ষ টাকায় ছাগল বাজার ইজারা নিয়েছি, সেই টাকা আদায় করতে প্রশাসন কতৃক বিকল্প ছাগল বাজার না দেওয়া পর্যন্ত এখানেই বসতে হবে।
জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর তাজ জনি'র মোবাইলে বেশ কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ঈদগাঁও ইউপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম বলেন, ডিসি সড়কের উপরে ছাগলের বাজার বসানো অনুচিত কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এইখানে ছাগল বাজার বসে আসছে। ছাগল বাজার বসানোর বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। তারপরও সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলতে হবে।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমা এই বিষয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।