কক্সবাজারে জেলা প্রশাসক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল ম্যাচকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত দর্শকরা স্টেডিয়াম ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। ‘বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম’ মুহূর্তের মধ্যে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন। এর আগে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন শাহীনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ঘুরে দেখেন।
জেলা প্রশাসক সালাহ্উদ্দিন জানান, ভাঙচুর ও হামলার বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আরেকটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি হামলা-ভাঙচুরের কারণ খুঁজবে, অন্যটি খতিয়ে দেখবে অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি ও কালোবাজারির বিষয়টি।
তিনি বলেন, “ফাইনাল খেলাকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি অনেক দর্শক আহত হয়েছেন। তদন্ত কমিটি দ্রুত রিপোর্ট দেবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফউদ্দীন শাহীন জানান, স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি দর্শক ভেতরে প্রবেশ করে। টিকেট থাকা সত্ত্বেও প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে বাইরে অপেক্ষমাণ অনেকে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, “ঘটনার সময় প্রায় ৫০ হাজার দর্শক মাঠে অবস্থান করছিলেন। সমবেত দর্শকের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অপ্রতুল ছিল। তবে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। প্রাণহানি ঘটেনি।”
গত শুক্রবার বিকেল ৩টায় রামু ও টেকনাফ উপজেলা একাদশের মধ্যে ফাইনাল ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু খেলা শুরুর আগেই উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুর ২টার মধ্যেই ধারণক্ষমতার বাইরে দর্শক প্রবেশ করে গ্যালারিতে। একপর্যায়ে উত্তেজিত দর্শকরা গেইট ভেঙে মূল মাঠে ঢুকে পড়ে।
সেনা সদস্যসহ বিপুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে নামলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আয়োজক কমিটি খেলা স্থগিতের ঘোষণা দেয়। ঘোষণার পর মুহূর্তেই হাজারো দর্শক মাঠে নেমে ফের ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
ড্রেসিং রুম, প্রেসবক্স, স্টেডিয়াম ভবন, এমনকি মাঠের গোলপোস্টও ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ লাঠিপেটা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় সদর উপজেলার ইউএনও নিলুফার ইয়াসমিন চৌধুরী, সদর থানার ওসি (তদন্ত) ফারুক হোসেন, একাধিক পুলিশ সদস্য ও আনসারসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি বলে জানান সদর থানার ওসি মো. ইলিয়াস খান। তিনি বলেন, “পুলিশের ওপর হামলার বিষয়েও মামলা হবে, তবে সামগ্রিক ঘটনা নিরূপণ করেই তা করা হবে।”
উল্লেখ্য, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া এই গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল ছিল শুক্রবার।