কক্সবাজার সদর-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় এই নেতার কাছে রাজনীতি মানে শুধু দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অর্জনের এক দীর্ঘ যাত্রা।
চিটাগং ট্রিবিউনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,“আমি ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। জনগণের সুখ-দুঃখের সাথেই আমার পথচলা। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। আবারও যদি মানুষ ধানের শীষে ভোট দেয়, আমি তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে কাজল মৎস্যখাতকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর করার পরিকল্পনা জানিয়েছেন। কক্সবাজারের অর্থনীতির বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে সমুদ্র ও উপকূলীয় সম্পদে। তিনি বলেন,“আমি চাই আধুনিক মৎস্যচাষ, মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প গড়ে তুলতে। এতে কর্মসংস্থান বাড়বে, স্থানীয় অর্থনীতি শক্ত হবে,”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মৎস্যখাত নিয়ে কাজলের এই দৃষ্টিভঙ্গি কক্সবাজারের সাধারণ জেলেদের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও গভীর করবে।
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলার জন্য একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “পর্যটন আমাদের গর্ব, কিন্তু পরিকল্পনার অভাবে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। আমি চাই পরিবেশ, অবকাঠামো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা সব একসাথে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন হোক।”
বিএনপির এই প্রার্থী শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্লোগানে নয়, বাস্তবসম্মত উন্নয়ন ভাবনায় ভর করেই মাঠে নামছেন বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা।
রামু ও সীমান্ত অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংকট নিয়ে তিনি বলেন,“সীমান্ত সুরক্ষা শুধু আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত। বৈধ বাণিজ্যিক করিডোর চালুর মাধ্যমে স্থানীয় মানুষকে বিকল্প জীবিকার সুযোগ দিতে চাই।”
তার এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকে মনে করছেন, সীমান্ত বাণিজ্য ও উন্নয়নকে একসাথে ভাবা এটি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিকের পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি।
প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যের আহ্বান জানিয়ে কাজল বলেন, “সব দলের রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা হতে পারে, কিন্তু সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি বজায় থাকা জরুরি। প্রতিযোগিতা হোক উন্নয়ন ও সেবায়, শত্রুতা নয়।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “জামায়াতের প্রার্থী বাহাদুর ভাই দীর্ঘদিনের লড়াকু কর্মী। আমি চাই, সবাই মিলে কক্সবাজারের উন্নয়নে কাজ করি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য কক্সবাজারের উত্তপ্ত রাজনীতিতে নতুন ধরনের সংস্কৃতির ইঙ্গিত দিচ্ছেযেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু বিরোধ নয়।
নির্বাচিত হলে কক্সবাজার সদর, রামু ও নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়ে এই বিএনপি নেতা বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো ও কর্মসংস্থানের উন্নয়নই আমার অগ্রাধিকার। আমি চাই, এই তিন উপজেলা হোক উন্নয়নের মডেল।” তিনি বিশ্বাস করেন জনগণ সুযোগ পেলে আবারও ধানের শীষকে ভালোবাসায় সিক্ত করবে।
চিটাগং ট্রিবিউনের বিশেষ আয়োজন নির্বাচনী হালচালে এসব বিষয় উঠে আসার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন লুৎফুর রহমান কাজল কক্সবাজার বিএনপির অভিজ্ঞ ও গ্রহণযোগ্য মুখ। তার দীর্ঘ সংগঠনিক অভিজ্ঞতা, মৎস্য ও পর্যটনখাতে স্পষ্ট পরিকল্পনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতি সৌহার্দ্যমূলক অবস্থান, এই নির্বাচনকে আরও ভারসাম্যপূর্ণ ও পরিণত পরিসরে নিয়ে যেতে পারে।
চিটাগং ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপের শেষে কাজল বলেন, “আমি চাই মানুষ আমাকে রাজনীতিক নয়, আপনজন হিসেবে দেখুক। রাজনীতি মানে সেবা, উন্নয়ন আর ভালোবাসা।”
চার দশকের অভিজ্ঞতা, মাঠের সংগঠন ও উন্নয়নের অঙ্গীকার মিলিয়ে কক্সবাজার-৩ আসনে বিএনপির এই প্রার্থী এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু