চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) তে বাংলা বিভাগের বিতর্কিত ছাত্রীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নিয়ে উত্তেজনা, আন্দোলনবিরোধী পোস্টের জেরে শিক্ষার্থীরা ১০১ কোর্সের পরীক্ষা বর্জন করে।
রোববার (২০ অক্টোবর) সকালে প্রথম বর্ষের সমাপনীর ১০১ নাম্বার কোর্সের পরীক্ষা বর্জন করে বিভাগের সভাপতির কক্ষের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
এ সময় আন্দোলনের বিরুদ্ধে থাকা জান্নাতুল ফেরদৌস মুন্নি নামে ঐ ছাত্রী পরীক্ষায় বসলে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা না দেওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর বরাবর গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করে।
জানা গেছে, সম্প্রতি সংগঠিত ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন উসকানিমূলক পোস্ট করেছিল ঐ ছাত্রী। যার ফলে ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাকে সেসময় বয়কট করে। এছাড়া ঐ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে ব্যাচের বাকিরা পরীক্ষায় বসবে না বলেও বিভাগকে অবগত করেছিল তারা। তবে পরবর্তীতে বিভাগের শিক্ষকদের অনুরোধে ঐ ছাত্রীর ক্ষমা চাওয়া সাপেক্ষে পরীক্ষায় বসতে দিতে সম্মত হয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ঐ ছাত্রী ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানালে ব্যাচের বাকি শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই তার সঙ্গে পরীক্ষায় বসতে রাজি হয়নি। যার ফলে এদিনের ১০১ নাম্বার কোর্সের পরীক্ষক স্থগিত ঘোষণা করে বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ট্রিবিউন কে বাংলা বিভাগের ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীই রনি হোসেন বলেন, আমরা বিভাগকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলাম, মুন্নি পরীক্ষায় বসলে আমরা পরীক্ষা বর্জন করব। কিন্তু পরবর্তীতে বিভাগের শিক্ষকদের কথায় তার ক্ষমা চাওয়ার প্রেক্ষিতে পরীক্ষায় বসতে দিতে সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু সে কোনোভাবেই তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে রাজি হয়নি। এমনকি তার আচরণ এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল যে, শিক্ষকরা অনুরোধ করা সত্ত্বেও সে ক্ষমা চাইতে রাজি হয়নি। তাই আমরা ব্যাচের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সে পরীক্ষায় বসলে আমরা কোনোভাবেই পরীক্ষা দেব না।
বয়কটকৃত শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদাউস মুন্নী চট্টগ্রাম ট্রিবিউন কে বলেন, আমি শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ছিলাম। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে টিয়ার গ্যাসে আহত হয়েছিলাম। হাইকোর্ট থেকে যখন কোটার রায় দেয়, তখন আমি আন্দোলন থেকে বের হয়ে পড়ি। এরপর আমি একটা পোস্ট করি- 'কোটার পক্ষে ছিলাম, কিন্তু এখন যেটা চাচ্ছেন সেটার পক্ষে না।' এই পোস্টের কারণেই আমাকে বিভাগ থেকে বয়কট করে। আজ আমি পরীক্ষা দিতে যাওয়ায় আমার সহপাঠীরা ক্লাস থেকে বের হয়ে যায়। আমি পরীক্ষা দিতে চাই। আমি তো কোনো ক্রাইম করিনি। শিক্ষকদের কাছে আমি সবকিছু বলেছি। তারা আমাকে যথেষ্ট কো-অপারেট করেছে। যা করেছে শিক্ষার্থীরাই করেছে। বিভাগ থেকে লিখিত আকারে যদি আমাকে পরীক্ষা দিতে না বলে, সেটা আমি গ্রহণ করব এবং পরে অ্যাকশন নিব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসলিমা বেগম চট্টগ্রাম ট্রিবিউন কে বলেন, পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত পরীক্ষার নতুন তারিখ এবং ঐ ছাত্রীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগামী মঙ্গলবার বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির মিটিং দিয়েছি। সেখানে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।