চকরিয়ায় থানা হাজতে দূর্জয়ের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন

রাজু দাশ, চকরিয়া
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি দূর্জয় চৌধুরীর থানা হাজতে মৃত্যুর ঘটনার চারদিন পার হলেও এখনো মামলা হয়নি। এ হত্যাকান্ডের জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফেস্টুন হাতে নিয়ে মানববন্ধন করেছে নিহতের স্বজন, সনাতনী সম্প্রদায়ের সর্বস্তরের জনগন।
মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে থানার সামনে শতাধিক সনাতনী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষের উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন করেন তারা।
এসময় মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি দূর্জয় চৌধুরীর জেলা হাজতে মৃত্যুর চারদিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন করেনি। আটক করা হয়নি স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমকে। উদ্ধার হয়নি দূর্জয় চৌধুরীর ব্যবহৃত ল্যাপটপ। যার কারণে ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষদের মাঝে। দ্রত স্কুলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকাসহ ওই স্কুলে শিক্ষকসহ প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান।
মানববন্ধনে চকরিয়া সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী মন্দির উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ছোটন দাশ গুপ্ত বলেন, দুর্জয় চৌধুরীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকারীসহ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
তিনি দাবি জানান, সম্প্রদায়ের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
দুর্জয় চৌধুরীর বাবা কমল চৌধুরী আক্ষেপ নিয়ে বলেন, তাঁর ছেলে গত কয়েকদিন যাবত শ্বাসকষ্ট রোগে ভুগছেন। গত বৃহস্পতিবার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম ফোন করে স্কুলে আসতে বলেন। তখন তাঁকে ফোন করে ছেলের অসুস্থতার খবর জানান। কিন্তু তিনি আমার ছেলেকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে স্কুলে আসতে বাধ্যকরে। আমার ছেলের ল্যাপটপ ও ব্যাক্তিগত ব্যাগটা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় স্কুলে চলে যান। পরে
সকাল ১১টার দিকে কল করে আমাকে স্কুলে যেতে বলেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম। আমি ১০ মিনিটের মধ্যে স্কুলে যায়। ওখানে গিয়ে দেখি শিক্ষকরা সবাই বসে আছে। সেখানে আমার ছেলে দুর্জয়ও ছিল। এ সময় প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম বলেন, আপনার ছেলে টাকা আত্মসাত করেছে। তখন আমি সকল শিক্ষকের সামনে বলি, আমার ছেলে যদি টাকা আত্মসাৎ করে, আমি সব টাকা পরিশোধ করবো, মুচলেকাও দিবো। প্রয়োজনে ওর চাকরি চলে যাক, কিন্তু আপনারা অন্যায়ভাবে কিছু করবেন না।
রাতে চকরিয়া থানার পুলিশ কাছে সোপর্দ করেন। তারপর ওরা সবাই মিলে আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন। আমি আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি জানায়।
তিনি আরও বলেন, ওই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানমের স্কুলের দুর্নীতির সমস্ত ডকুমেন্ট আমার ছেলের ল্যাপটপে আছে। আমার ছেলে উপজেলার মধ্যে সেরা কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে সনদ পেয়েছে। আমার ছেলের ল্যাপটপে এমন কিছু তথ্য ছিল, যা ফাঁস করে দেবে ভেবে দুর্জয়কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করানো হয়েছে। আমার ছেলের ওই ল্যাপটপটি এখনো হদিস দিতে পারেনি পুলিশ।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, নিহত দুর্জয় চৌধুরী বাবা কমল চৌধুরী বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেন। উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এই ঘটনার সাথে জড়িত সব কিছু বিশ্লেষন করে মামলা রুজু করা হবে বলে জানান ওসি।
উল্লখে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রাবেয়া খানম ওই স্কুলের অফিস সহকারি দুর্জয় চৌধুরী চেক জালিয়াতি করে ও নগদে প্রতিষ্টানের ২ লাখ ৮৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে চকরিয়া থানায় একটি অভিযোগ করেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে দূর্জয় চৌধুরীকে হাজতে আটকে রাখেন। এদিন ভোর ৪টার দিকে হাজতে ফাঁসিতে ঝুলানো অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন।