প্রিন্ট এর তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫, ৫:০১ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ২২, ২০২৫, ৬:১২ অপরাহ্ণ
চকরিয়ায় যুবকের মরদেহ ঝুলছিল থানা হাজতে, দায় কার?
রাজু দাশ, চকরিয়া
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্জয় চৌধুরী (২৬) নামের এক যুবক নিজের পরনের শার্ট পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। আটকের পর থানা হাজতে ‘আত্মহত্যা’ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দুর্জয় চৌধুরী পরিবার।
আজ শুক্রবার সকাল দশটার দিকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রূপায়ন দেব থানার হাজত থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করেন। এ সময় সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।
দুর্জয় চৌধুরী চকরিয়া পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী হিন্দু পাড়ার কমল চৌধুরীর ছেলে। তিনি চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন।
এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. জসীম উদ্দিন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. জসীম উদ্দিন বলেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খানম গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাতে দুর্জয়কে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ভোররাতে নিজের পরনের শার্ট ব্যবহার করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন দুর্জয় চৌধুরী।
তবে হাজতের ভেতরে তিনি কীভাবে আত্মহত্যা করেছেন-সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু জানাতে পারেননি পুলিশের এই কর্মকর্তা। তিনি নিজেও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ঘটনার আসল চিত্র উঠে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
দিকে থানায় হেফাজতে এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দুর্জয় চৌধুরী স্থানীয়রা, তাঁরা জানান- থানা হাজতেই নিজের পরনের শার্ট লোহার গ্রিলের পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন তিনি। ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বলছে, এটি ‘আত্মহত্যা’। তবে প্রশ্ন উঠেছে, থানা হাজতে কিভাবে একজন আসামি আত্মহত্যা করেন। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা কী করেন? থানায় বসানো সিসিটিভি ক্যামেরা আদৌ মনিটরিং করা হয় কিনা!
চকরিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এ দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, চকরিয়া থানার হাজতখানা থেকে দূর্জয় চৌধুরীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। ফেসবুকে পাওয়া ছবি দেখে, তাঁর লাশের ধরণ দেখে আত্মহত্যা কীনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবুও এটা আত্মহত্যা নাকি হত্যা তদন্ত করা দরকার।
তবে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম দাবি, দুর্জয় চৌধুরী আত্মহত্যার আগে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যের সহযোগিতা রাতে তার বাবা- মার সাথে কথা বলেন।তার দীর্ঘদিন যাবত শ্বাসকষ্টের অসুস্থ ছিলেন। তাঁর পরিবারের আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে তাকে আলাদা কক্ষ রাখা হয়েছিল।
জানা যায়, দুর্জয় চৌধুরী গত দেড়বছর আগে চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর যোগদান করেন।
সরেজমিনে সকাল সাড়ে ১২টার দিকে পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের ভরামুহুরী হিন্দু পাড়া দুর্জয় চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা, বাবা পরিবারসহ আরও অনেক স্বজন আহাজারি করে কান্না করতে থাকেন।
এ সময় কথা হয় দুর্জয় চৌধুরী মা বেবির সাথে। কান্নারত অবস্থায় তিনি খবরের কাগজকে’ বলেন, ‘আমার ছেলেকে গতকাল রাতে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবিয়া খানন পুলিশের কাছে তুলে দেন। আমি আমার ছেলেকে বলেছিলাম সকালে তোকে ছাড়িয়ে আনবো। কিন্তু সকাল বেলায় ফিরলো লাশ হয়ে।
চকরিয়া উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) রুপায়ন দেব বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাবিয়া খানমসহ ১৫জন শিক্ষক আমার দপ্তরে এসে তিনটি অভিযোগ করে। বিদ্যালয়ের ফান্ডের কিছু টাকা ব্যাংকে জমা না দিয়ে, খরচ করে ফেলে। সেখানে দুটি চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা স্বীকার করে। তখন তাঁদের আইনের আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিই। রাতে জানতে পারি, তাঁকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। ভোরে আত্মহত্যা করার কথা জানান চকরিয়া সার্কেলের এএসপি অভিজিৎ দাস। পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (এডিএম) নির্দেশে থানায় গিয়ে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করি।
এদিকে বিকেল ৩ টায় সর্বস্তরের জনসাধারণের ব্যানারে দুর্জয় চৌধুরী জেল হাজতে হত্যার ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিক্ষোভ করেন চকরিয়া থানার সামনে। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
এসময় উপস্থিত বিক্ষোভকারীরা জানান, থানার ভিতর দুর্জয় চৌধুরীকে হত্যা করা হয়েছে। ওসির প্রত্যহার করে দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদেরকে গ্রেপ্তার ও বিচারের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা থানার সামনে অবস্থান করবেন।
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত