চকরিয়ায় সোর্স পরিচয়ে থানায় পুলিশের ছত্রছায়া দালালদের রাজত্ব!

রাজু দাশ, চকরিয়া
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় থানায় পুলিশের সোর্স পরিচয়ে থানায় আগত সেবাপ্রার্থীরা পদে পদে হয়রানির, মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা, বিভিন্ন এলাকায় পুলিশকে সাথে নিয়ে অভিযান চালানোর সময় অর্থ হাতিয়ে নেয়াসহ পুলিশকে জিম্মি করে রেখেছে এসব সোর্স ও দালাল সিন্ডিকেট।
যদিও এ সোর্স ও দালাল সিন্ডিকেট দিনে আনাগোনা দেখা না মিললেও কিন্তু রাতে হয়ে উঠেন ভয়ঙ্কর পুলিশের সোর্স। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নিরীহ মানুষকে হয়রানী করে আসলেও রহস্যজনক কারণে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না চকরিয়া থানা পুলিশ।
বুধবার সরজমিনে থানায় ঘুরে দেখা যায়, সকল মামলা বা অভিযোগের বাদী ও বিবাদীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে দেখা যায়। পরবর্তীতে তারা সালিশের আকারে থানায় বা থানার আশপাশে বৈঠকের নামে উভয়পক্ষ থেকে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। এটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব দালাল চক্রের সঙ্গে পুলিশের একশ্রেণির কর্মর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। মুলত এসব কর্মকর্তার উমেদার হিসেবে দালালেরা কাজ করছে।
পৌর এলাকার জনৈক ব্যক্তি বলেন, আমি অভিযোগ করার জন্য থানায় যাওয়ার সময় থানার সামনে থাকা নাম অনিচ্ছুক থানা পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে আমাকে বলে, কেন আসছেন আমাকে বলেন। আমি সমস্যা সমাধান করে দিবো। আর থানার ভিতরে যাওয়া লাগবে না। এসময় তার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল একজন উপ- পরিদর্শক (এসআই) তিনিও তাদের সঙ্গে যাবার ইঙ্গিত দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, থানায় ইদানিং দালালরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দালাল চক্রের কারণে থানায় আগত সেবাপ্রার্থীরা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছে। সোর্স ও দালালচক্ররা পুলিশকে জিম্মি করে রেখেছে। থানাতে এমনিতে কিছু পেশাদার দালালচক্র সবসময় থানার সোর্স হিসাবে কাজ করে থাকেন। এছাড়াও ভূইঁফোর অখ্যাত পত্রিকার প্রতিনিধি, নাম সর্বস্ব অনলাইন পোর্টালের ফেসবুক চালক কিছু তরুণ নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থানায় দালালি করছে। এদের অনেকে বিভিন্ন নাম দিয়ে অনুমোদনহীন অনলাইন খুলে। সেখানে ভিডিও ছবি ছেড়ে সাংবাদিক হিসাবে নিজেদের জাহির করছে। থানায় সেবাপ্রার্থীর চেয়ে দালালের সংখ্যা বেশি। বিশেষকরে সাংবাদিক পরিচয়দানকারী তরুণেরা প্রায় সময় থানা কম্পাউন্ডে ঘুরাফেরা করে। থানায় কেউ জিডি, অভিযোগ, কিংবা মামলা করতে আসলেই দালালের খপ্পরে পড়তে হয়। দালাল চক্রের কারণে কিশোর গ্যাং, ভূমি দখল, মাদক কারবারীরা ফায়দা লুটতে থাকে। এতে পুলিশের নাম দিয়ে দালাল চক্র হাতিয়ে নেয় সেবাপ্রার্থী থেকে হাজার হাজার টাকা। ভুয়া সাংবাদিকেরা অনেক সময় রাত ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত থানায় বসে থাকে। এসব সাংবাদিকদের কারণে চকরিয়া থানা প্রকৃত সাংবাদিকেরা বিব্রত। থানায় দালাল ও ভুয়া সাংবাদিকের তৎপরতা বৃদ্ধিতে কর্মরত সাংবাদিক মহল।
এসব ভুয়া সাংবাদিক দৌরাত্ম্যের কারণে প্রকৃত সাংবাদিক পেশার সম্মান আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এসব ভুয়া সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে, যার মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, হুমকি প্রদর্শন, এবং নিরীহ মানুষকে হয়রানি। এমনকি ফেসবুকে ভুয়া সাংবাদিক ক্রমশ বাড়ছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
চকরিয়া প্রেসক্লাবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হক বলেন, থানায় দালালদের আনাগোনা বেড়ে গেলেও পুলিশ চাইলে এসব দালাল নির্মূল করা সম্ভব। আশা করি থানার ওসি এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, দালাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, কোন অফিসার দালাদের সাথে
সম্পর্কিত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।