শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুনে পুড়ল দুই শিক্ষার্থীর স্বপ্নের দোকান

চবি প্রতিনিধি – মেহেদী হাসান ইমন

দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। আর সেই আগুনে পুড়ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। ২০ মিনিটের আগুন কেড়ে নিয়েছে দুই বছরের লালিত স্বপ্নের ব্যবসা ও উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা স্বপ্ন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশনে ‘নোঙর ও স্ট্যাশন জ্যাম’ নামক দুটি দোকানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৯নভেম্বর ) সকাল ১০টার দিকে দোকান দুটিতে আগুন লাগে। দোকানে আগুন দেখে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয় আশপাশের লোকজন। পরে তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই আগুন তার ধ্বংসযজ্ঞ শেষ করেছে। আগুনের উৎপত্তি নিয়ে নানাজন নানা আলোচনা করছেন। কেউ বলছেন বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট, আবার কেউ বলছেন গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে। তবে এসব আলোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন দুই দোকানের স্বত্বাধিকারীরা। তারাও জানেন না কীভাবে এই আগুনের উৎপত্তি। দোকানে আগুন লাগার বিষয়টি এখনও রহস্যময়।

‘স্ট্যাশন জ্যাম’ দোকানের দুই স্বত্বাধিকারী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জিহাদ ও রাফি তালুকদার। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর তাদের এই দোকানের যাত্রা শুরু হয়। ফাস্ট ফুডের জন্য অল্প সময়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দোকানটি। শুরুর দিকে ভালোই চলছিল দুই বন্ধুর ব্যবসা। কোরবানির বন্ধের পর শিক্ষকদের কর্মবিরতি, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা।‌ সব মিলিয়ে লোকসানের ওপর ব্যবসা চলছিল তাদের। তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল তারা। অনার্স শেষ করার আগেই কিছু একটা দাঁড় করানোর স্বপ্ন থেকেই দুই বন্ধুর যাত্রা শুরু হয়েছিল। তবে নিষ্ঠুর আগুন সব কেড়ে নিয়েছে।

আগুন দুর্ঘটনায় সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে ‘স্ট্যাশন জ্যাম’-এর স্বত্বাধিকারী জাহিদুল ইসলাম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, অল্প পুঁজি নিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। বর্তমানে লসের ওপর থাকলেও হাত খরচ ও আমাদের নিজেদের খাওয়াদাওয়ার কথা বিবেচনা করে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এখন যেহেতু পুরোদমে ক্যাম্পাস চলছে আশা ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর। দোকানে যা ছিল সব পুড়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর দুই বছরে পা রাখত আমাদের প্রতিষ্ঠান।

আরেক দোকান ‘নোঙর’-এর স্বত্বাধিকারী হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফরহাদ ও একই সেশনে সমাজতত্ত্ব বিভাগের খাদিজা। অক্টোবরের ২০ তারিখ দুই লাখ টাকা দিয়ে নোঙরের আগের স্বত্বাধিকারীর কাছ থেকে তারা জিনিসপত্রসহ দোকানটি তারা কিনে নেন। এ ছাড়া দোকান ভাড়া বাবদ জমির মালিকের সাথে ৫০ হাজার টাকার জামানতে দুই বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। নভেম্বরের ২০ তারিখ তারা দোকানটির সূচনা করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই হিসেবে চলছিল প্রস্তুতির মহাযজ্ঞ। শুরুর আগেই সব শেষ। তবে হাল ছাড়ছেন না তারা।

‘নোঙর’ স্বত্বাধিকারী মো. ফরহাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, সকালে এক বন্ধু আমাকে কল করে জানায় স্টেশনের দোকানগুলোতে নাকি আগুন লেগেছে। ওখানে আমারটা আছে কিনা দেখতে বলল। আমি হলে ছিলাম। দ্রুত রিকশা নিয়ে গিয়ে দেখি সব পুড়ে শেষ। যদিও কিছুক্ষণের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস এসেছিল। ততক্ষণে সব শেষ হয়ে গেছে। দুই লাখ টাকায় কেনার পরেও বিভিন্ন কিছু ঠিকঠাক ও নতুন কিছু আসবাবপত্র লাগানোর জন্য প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গতকালও আমি দোকানে কাজ করেছি।

নিজের সব শক্তি ও সাধ্য দিয়ে দোকানটি চালুর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মো. ফরহাদ। তবে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চেয়েছেন ফরহাদ। ফরহাদ বলেন, এটি আমাদের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা। তারপরও আমরা এটি চালিয়ে যাব। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা চাই। সেই সহযোগিতা হবে সার্ভিসের বিনিময়ে। আশা করি, শিক্ষার্থীরা আমাদের দোকানের পাশে দাঁড়াবেন।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত চার শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মি. চায়ের স্বত্বাধিকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম বলেন, আজকের পুড়ে যাওয়া নোঙর এবং স্টেশন জ্যামের জন্য আমরা ফান্ড রেইজ করছি। আমরা বিভিন্ন দোকানে দোকানে ফান্ড রেইজ বক্স রেখেছি। এ ছাড়া অনেকেই বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নিচ্ছেন। আশা করি শিক্ষার্থীরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে আমাদের ভাইদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সহযোগিতা করবেন।

সর্বাধিক পঠিত