চবি প্রতিনিধি - মেহেদী হাসান ইমন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা এবং অন্যান্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হলো।
আজ ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৬৬ সালে হাটহাজারীর ফতেপুরে ২৩শ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। বিশ্বের একমাত্র শাটল ট্রেন বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় শুরুতে চার বিভাগ, ২০৪ শিক্ষার্থী ও ৮ শিক্ষক নিয়ে যাত্রা করা এই প্রতিষ্ঠান বর্তমানে ১০টি অনুষদের অধীনে ৫৪টি বিভাগ, ৭টি ইনস্টিটিউট এবং ২৬টি অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদান করছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে প্রশাসনের পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ১০টায় চবি স্মরণ চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি স্মরণ চত্বর থেকে শুরু হয়ে কাটা পাহাড়, গ্রন্থাগার, জারুল তলা এবং কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ অতিক্রম করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। তার সঙ্গে ছিলেন উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মোঃ কামাল উদ্দিন, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীরা। শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের উচ্ছ্বাস এবং উপস্থিতি দিবসটির উদযাপনে উৎসবের রঙ যোগ করে।
সকাল ১০:৩০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক কাটার আয়োজন করা হয়। এরপর সকাল ১১:১৫টায় চবি সমাজ বিজ্ঞান মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রাণবন্ত উপস্থাপনার মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু করেন চবি প্রক্টর প্রফেসর ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। তিনি বলেন," জুলাইয়ের বিপ্লবের পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উৎযাপন করতে পেরে আনন্দিত। ক্যাম্পাসে সকল ছাত্র - ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে করতে আমি আমার দায়িত্বে অটুট থাকবো।"
উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ধরে রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজের আহ্বান জানিয়ে বলেন, "শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার লক্ষ্য রয়েছে।"
তিনি সোনালী ব্যাংকের অনলাইন ব্যবস্থা উদ্বোধনকালে জানান, "শিক্ষার্থীরা এখন থেকে একাডেমিক ফি অনলাইনে জমা দিতে পারবে, অফলাইন ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।"
ছাত্রদের দাবিতে ভিসি জানান, "শীঘ্রই চাকসু নির্বাচন, মেডিকেল সেন্টারে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, সেশনজট নিরসনে পদক্ষেপ, প্রতিটি হলে ওয়াশিং মেশিন, ক্যাম্পাসে জোবাইক ও ই-কার চালু এবং ছাত্রী উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে।"
দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, “৫৯ বছরে এসেও বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসিক সিট নিশ্চিত হয়নি। আমরা চাই, শহিদ তরুয়ার নামে বঙ্গবন্ধু হল নামকরণ করা হোক এবং শহিদ তরুয়া ও অতীশ দীপংকর হল দ্রুত শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক।"
তিনি আরও বলেন, " ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্যে গবেষণায় বরাদ্দ ৫% খুবই অপ্রতুল। আমরা চাই, গবেষণার সেক্টরগুলো সচল থাকুক। একইসঙ্গে ছাত্র সংসদ পুনরায় চালু এবং লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবিও জানাচ্ছি।"
উন্নয়নের পথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ পূরণ এবং গবেষণার ক্ষেত্রে আরও বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে এই বিশ্ববিদ্যালয় তার ঐতিহ্যের সঙ্গে অগ্রগতির ধারাকে আরও গতিশীল করবে। ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে।