শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

চবিতে শিবিরের নবীন বরণ, দুর্নীতি ও শিক্ষা বৈষম্য নিয়ে শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতার সমালোচনা

চবি প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রায় আড়াই হাজার নবীন শিক্ষার্থীকে বরণ করে নিতে নবীন বরণ ও ক্যারিয়ার গাইডলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির। শনিবার (১৬ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ সংলগ্ন বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। সভাপতিত্ব করেন চবি শাখা শিবিরের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইরামনাস ন্যাশনাল ফোকাল পয়েন্টস ইউরোপীয় কমিশনের আঞ্চলিক পরিচালক ও ইরাসমাস মন্ডুস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ড. আশিকুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী এবং শিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য ও মহানগর দক্ষিণ সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন রনি।
কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন,
“আমাদের দেশের স্বাধীনতার সময়ে যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছিল, আজ তারা আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। সিঙ্গাপুর একসময় ছিল জেলে পাড়া, এখন তাদের রাষ্ট্র ও অর্থনীতি বিশ্বের শীর্ষে। অথচ আমাদের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ দুর্নীতি। পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় টাকার দ্বিগুণ টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্র শিক্ষায় বৈষম্য তৈরি করেছে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীর পেছনে সরকার খরচ করে বছরে ১০ হাজার টাকা, স্কুলে পড়লে ২৫ হাজার, আর ক্যাডেট কলেজের শিক্ষার্থীর জন্য খরচ হয় দেড় লাখ টাকারও বেশি। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা এই বৈষম্যের বড় শিকার।”
হলে রাজনীতি প্রসঙ্গে সাদ্দাম বলেন, “অনেকে বলে শিবির হল কমিটি দেয় না কেন? আসলে ছাত্ররাই তা চায় না। ৮০-৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী জানিয়ে দিয়েছে হলে রাজনীতি হবে না। কারণ তারা গণরুম, গেস্টরুম কালচার, চাঁদাবাজি আর ছিনতাই দেখে এসেছে। তবে যখন ছাত্ররা চাইবে হলে রাজনীতি, তখনই শিবির হল কমিটি দেবে। আমরা শিক্ষার্থীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবো।”
নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সাদ্দাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আদু ভাই হওয়ার সুযোগ নেই। প্রথম বর্ষ থেকেই নিয়মিত পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। ফার্স্ট ইয়ারকে রেস্ট ইয়ার মনে করা যাবে না। একবিংশ শতাব্দীতে সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।”
ইঞ্জিনিয়ার ড. আশিকুর রহমান বলেন, “যেখানে ভর্তি হয়েছেন সেটিই এখন আপনার স্বপ্ন। এটিকে কীভাবে সফল করা যায় সেটি ভাবতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তমঞ্চ, এখান থেকে চাইলে উন্নতির দিকে আবার চাইলে ধ্বংসের দিকেও যাওয়া সম্ভব।”
অধ্যাপক ড. এনায়েত উল্যা পাটওয়ারী বলেন, “শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব শুধু নিজের নয়, বরং বাবা-মা ও শিক্ষকদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকেই নিজেদের ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক নবীন শিক্ষার্থী বলেন,
“আজকের প্রোগ্রামে না এলে অনেক কিছু মিস করতাম। আন্তর্জাতিক স্কলাররা এসে আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন—এটি ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা।”
আরেকজন ছাত্রী বলেন, “সবকিছু সুন্দরভাবে আয়োজন করা হয়েছে। আমাদেরকে যেভাবে বরণ করা হয়েছে, তা আগে কখনও হয়নি।

সর্বাধিক পঠিত