প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে

রাজিন সালেহ
চলমান তহবিল সংকটের কারণে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে নতুন অর্থায়ন না পেলে কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের মৌলিক শিক্ষা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে।
ইউনিসেফ জানায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তাদের শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য মানবিক সহায়তার তহবিল উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। এর ফলে ইউনিসেফ-সমর্থিত শিক্ষাকেন্দ্রে ভর্তি থাকা শিশুর ৮৩ শতাংশের শিক্ষাজীবন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তহবিল সংকটের কারণে ইউনিসেফ কিছু কষ্টকর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কিন্ডারগার্টেন থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা ১ হাজার ১৭৯ জন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষকের সঙ্গে চুক্তি শেষ হবে। এই শিক্ষকেরা মূলত স্থানীয় হোস্ট কমিউনিটির সদস্য।
বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, “যে শিশুদের কথা আমরা বলছি, তারা বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় শিশুদের অন্যতম। আমরা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। কিছু তহবিল পাওয়া গেলেও তা পর্যাপ্ত নয়, এবং সময়মতো না এলে শিক্ষা কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হতে পারে।”
ইউনিসেফ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ঈদের অতিরিক্ত ছুটির সঙ্গে মিলিয়ে সব শিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে ইংরেজি, বিজ্ঞান ও সামাজিক শিক্ষা বিষয় বাদ দিয়ে শুধু সাক্ষরতা, বার্মিজ ভাষা, গণিত, জীবনদক্ষতা ও সামাজিক-মানসিক শিক্ষা চালু থাকবে।
নতুন পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক নির্দেশিকা কেনা হবে না; পুরোনো বই ব্যবহার করতে হবে। বাতিল করা হয়েছে বছর শেষে মূল্যায়ন ও প্লেসমেন্ট টেস্টও। ছুটির সময় শিক্ষকদের পারিশ্রমিকও বন্ধ থাকবে।
তহবিল ঘাটতি মোকাবিলায় ইউনিসেফ তাদের নিজস্ব কর্মীসংখ্যাও হ্রাস করেছে এবং সীমিত সম্পদ সবচেয়ে প্রভাববিস্তারী ও সাশ্রয়ী কার্যক্রমে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিসেফ বলেছে, “শিক্ষা কোনো বিলাসিতা নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। মানবিক সংকটের সময় শিক্ষা শিশুদের সুরক্ষা দেয়, আশার আলো দেখায় এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার পথ তৈরি করে।”
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ইতোমধ্যে সহায়তা প্রদানকারী দাতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ইউনিসেফ নতুন করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, নতুন ও বর্ধিত বিনিয়োগ ছাড়া রোহিঙ্গা শিশুদের অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।