সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

ফুটপাতের মালিকানা: নাগরিক অধিকার নাকি অবৈধ দখলদারিত্ব?

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ ইরফান আলী ফাহিম

চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন এলাকার ফুটপাতগুলো পথচারীদের চলাচলের জন্য বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে তা দখলদার ব্যবসায়ীদের কবলে। চা বোর্ড রাস্তার মাথা, বায়েজিদ মাজার গেইট, ক্যান্টনমেন্ট গেইট, ড্রাইভার কলোনি ও পাবলিক স্কুল রাস্তার মাথা পর্যন্ত ফুটপাতের অবস্থা নাজুক। ফলে পথচারীরা হাঁটার জায়গা না পেয়ে পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, এসব ফুটপাত দখল করে চলছে হকারদের ব্যবসা। চা বোর্ড রাস্তার মাথা থেকে ক্যান্টনমেন্ট গেইট পর্যন্ত ফুটপাতজুড়ে বসানো হয়েছে ভ্যানগাড়ি, চা-সিঙ্গারার দোকান ও বিভিন্ন ধরনের অবৈধ ব্যবসা। গোপন সূত্রে জানা গেছে, ফুটপাত দখলকারীরা নিয়মিত দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০ টাকা চাঁদা দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই চাঁদা আদায়ের নেতৃত্বে রয়েছে হকার্স বাবুল নামের এক ব্যক্তি, যার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

সিন্ডিকেটের রমরমা ব্যবসা

ক্যান্টনমেন্ট গেইট থেকে ড্রাইভার কলোনি পর্যন্ত ফুটপাতের দখল আরও ভয়াবহ। এখানে রয়েছে ভাঙ্গারির দোকান, চোরাই তেলের দোকান, রিকশার গ্যারেজ, এমনকি দলীয় পার্টি অফিসও। স্থানীয়দের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবেই এ অবস্থা চলছে।

পথচারী মো. আলামিন বলেন,
“প্রতিদিন সকাল-বিকেল এই রাস্তা দিয়ে যাই। বিকেলে ফুটপাত দখলের কারণে রাস্তায় নামতে হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক। একদিন ফুটপাত না পেয়ে রাস্তায় নামায় চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় আমার গর্ভবতী স্ত্রী আহত হন।”

পথচারী মো. রাশেদুল ইসলাম জানান,
“সাংবাদিকরা রিপোর্ট করলেও অভিযানের ১-২ দিন পর আবারও দখলদাররা ফিরে আসে। এটা যেন একটি চক্র।”

আরেক পথচারী মো. মিজানুর রহমান বলেন,
“হকার্স বাবুলের নেতৃত্বে যে সিন্ডিকেট চলছে, তা ভেঙে না ফেললে ফুটপাত কখনো দখলমুক্ত হবে না।”

হকার্স বাবুলের মন্তব্য

এ বিষয়ে হকার্স বাবুল বলেন,
“আমি বহুদিন ধরেই প্রশাসন, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছি। বিএনপি-আওয়ামী লীগ উভয়ের সঙ্গেই সম্পর্ক আছে। আপনারা নিউজ করলে কিছুই হবে না।”

পুলিশের প্রতিশ্রুতি

বায়েজিদ বোস্তামী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফুর রহমান বলেন,
“ফুটপাত দখল ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পথচারীদের প্রত্যাশা

পথচারীদের দাবি, কর্তৃপক্ষ যেন দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয় এবং সিন্ডিকেট ভেঙে পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাত উন্মুক্ত করে।

 

সর্বাধিক পঠিত