রবিউল আলম, ইবি প্রতিনিধি।
হযরত মুসা (আ:)-কে যখন নবুয়ত দেয়া হয় তখন মিশরের শাসক ছিলেন ফেরাউন। নিজেকে খোদা দাবি করা এবং তার জনগোষ্ঠীর উপর জুলুমের জন্য তাকে এখন পর্যন্ত মানুষ মনে রেখেছে এবং পরবর্তী সকল জালেমকে তার সাথে তুলনা করা হয় ঘৃণ্য প্রতীক হিসেবে।
এবার কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত বইমেলায় দেখা মিলেছে ‘ফেরাউন কর্নার’। যদিও এটি ফেরাউনকে উদ্দেশ্য করে নয় বরং ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দীর্ঘ পনেরো বছর বাংলাদেশের ক্ষমতার মসনদ দখল করে থাকা শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে প্রদর্শন করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা দীর্ঘ পনেরো বছর বাংলাদেশে স্বৈরশাসন কায়েম করে মানুষের অধিকার হরণ করা এক শাসকের নাম। তার সময় মানুষ হারায় তার ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং দেশে অপূরণীয় ক্ষতি করে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ আন্দোলন করেও তার মসনদ নড়াতে পারেনি। কিন্তু সর্বশেষ ২০২৪ সালের ছাত্র জনতার কোটা বিরোধী আন্দোলন রূপ নেয় স্বৈরাচার হাসিনার পতনের আন্দোলনে। ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে ক্ষমতার মসনদ ত্যাগ করতে বাধ্য হয় শেখ হাসিনা।
এদিকে ইবিতে ২০২৫ সালে ভাষা শহিদদের স্মরণে আয়োজিত বইমেলায় স্থান পেয়েছে 'ফেরাউন কর্নার', 'ঘৃণা বাণ' এবং '৫২ থেকে ২৪' নামক তিনটি কর্নার। তিনটিই দেশের সাবেক সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে স্থাপন করা হয়েছে।
'ফেরাউন কর্নার' -এ শেখ হাসিনাকে একটি রাক্ষসরূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়, "একটি অক্ষরের জন্য , যারা জীবন দিতে জানে// অধিকার কাইড়া নিলে, ক্যামনে তারা মানে!" এটি দ্বারা বুঝানো হয়েছে ১৯৫২ সালে যেমন এদেশের মানুষেরা তাদের ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে, সেই দেশের মানুষেরাই যদি তাদের অধিকার কেড়ে নেয়া হয় তবে তা তারা কোনোভাবেই মেনে নিবে না।
এ কর্নারের উপরে আহ্বান জানানো হয়েছে, 'আসুন ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করি... ' এছাড়াও এখানে স্থান পেয়েছে হাসান রোবায়েতের উক্তি, "গুম হয়েছে কত মানুষ, শহীদ কত মায়ের পুত// রক্ত দিয়া অজু কইরা, পড়ত খুনী তাহাজ্জুদ"। এভাবেই বইমেলায় শেখ হাসিনার প্রতি আয়োজকের মনোভাব ব্যক্ত করা হয়েছে।
এছাড়াও এখানে শান্তিমিত্রের 'ঘৃণা বাণ' স্থান পেয়েছে। তিনি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, "এ জগতের তাবৎ ঘৃণা, বর্ষিত হোক তোর উপর// জাহান্নামের কীট তুই,
অগ্নিতে ভরুক তোর উদর"
'৫২ থেকে ২৫' কর্নারে শান্তিমিত্রের নিচের উক্তিটি স্থান পেয়েছে। "৫২ আমার মুখের ভাষা স্বর্গ থেকে পাওয়া // সালাম বরকতের রক্তে হলো জীবনের গান গাওয়া। ৭১ এর স্বাধীনতা উড়িয়ে নিলো ফ্যাসিবাদের হাওয়া। ২৪ এ তা ফিরে পেতে রক্তসাগরে জীবনতরী বাওয়া।" এখানে তৎকালীন পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সাথে শেখ হাসিনার তুলনা করে একটি ছবি উপস্থাপন করা হয়েছে।
বইমেলায় এ ভিন্নধর্মী কর্নার দর্শনার্থী শিক্ষার্থীরা বলেন, শেখ হাসিনা এদেশের শত্রু, এদেশের মানুষের শত্রু। তার বাবা ফ্যাসিবাদের বীজ বুননের কারণে যেমন জীবন দিয়ে তার মূল্য পরিশোধ করেছেন, তেমনি ২৪ এর আন্দোলনের মাধ্যমে তার দীর্ঘ পনেরো বছরের ফ্যাসিবাদকে আমরা উৎখাত করেছি। তবে এতেই শেষ নয়। পনেরো বছরের সকল গুম-খুন এবং অত্যাচারের হিসাব তাকে দিতে হবে। সর্বশেষ চব্বিশের আন্দোলন আমার ভাইদের রক্তের মূল্য তাকে দিতে হবে। তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। তার কৃতকর্ম যেন আমরা ভুলে না যাই সেজন্য বইমেলায় এ ভিন্নধর্মী আয়োজন করার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, বইমেলায় ফেরাউন কর্নার রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে এই মেসেজ দেয়া যে হাসিনা যে ফেরাউনি কায়দায় আমাদের উপর জেঁকে বসেছিল তা আমরা ভুলিনি। তার অত্যাচার-নির্যাতন আমরা ভুলিনি। কেউ যেন ভুলে না যায়। আমরা আরেকটি মেসেজ দিতে চাই যে কেউ যদি আবার সেই ফেরাউনি কায়দায় হাসিনার অনুকরণ করতে চায় তার পরিণতিও হাসিনার মতোই হবে। যারা হাসিনার অনুকরণ করতে চাচ্ছে তারা যেন এ বিষয়টি মাথায় রাখে।