যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪৮টি এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান কিনবে সৌদি আরব, ইসরায়েলের শর্ত

চিটাগং ট্রিবিউন ডেস্ক
সৌদি আরবের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে নতুন উত্তাপ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি এগোতে থাকলেও ইসরায়েল জোর দিচ্ছে, রিয়াদকে এই উন্নত যুদ্ধবিমান দিতে হলে আগে সৌদি–ইসরায়েল কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে।
সৌদি আরবের জন্য এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান বিক্রির আলোচনাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে ইসরায়েল। তারা বলছে, এই অস্ত্র সরবরাহ অবশ্যই সৌদি–ইসরায়েল সম্পর্কের অগ্রগতির সঙ্গে শর্তযুক্ত হতে হবে। বিষয়টি নিয়ে অনলাইন নিউ ইয়র্ক পোস্ট একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
অ্যাক্সিয়সকে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে রিয়াদকে এফ–৩৫ সরবরাহের অনুমোদন কেবল তখনই দেওয়া উচিত, যখন দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক স্বাভাবিকীকরণে অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।
তুরস্ককে এফ–৩৫ সরবরাহের ব্যাপারে যেভাবে তেলআবিব কঠোর অবস্থান নেয়, সৌদি আরবের ক্ষেত্রে তাদের উদ্বেগ তুলনামূলক কম। ওই কর্মকর্তা বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কাঠামোর অংশ হিসেবে সৌদি আরবও যুক্ত হলে এই উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ে ইসরায়েলের আপত্তি থাকবে না।
যুক্তরাষ্ট্র–সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি এবং সম্ভাব্য এফ–৩৫ বিক্রি নিয়ে আগামী মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বৈঠক হওয়ার কথা। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, রিয়াদ পশ্চিমাঞ্চলে এফ–৩৫ মোতায়েন করলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই তারা চাইছে, যেকোনো বিক্রি কূটনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গেই কঠোরভাবে বেঁধে দিতে হবে।
ইসরায়েলের কাছে বর্তমানে ৪৫টি এফ–৩৫ রয়েছে, আরও ৩০টি অর্ডারে আছে। মধ্যপ্রাচ্যে অন্য কোনো দেশের কাছে এই উন্নত স্টেলথ যুদ্ধবিমান নেই।

এফ–৩৫ বিশ্বের অন্যতম উন্নত স্টেলথ যুদ্ধবিমান। এর সর্বোচ্চ গতি মাখ ১.৬ (প্রায় ঘণ্টায় ১২০০ মাইল)। এর তিনটি সংস্করণ রয়েছে—F-35A (সাধারণ টেক–অফ ও ল্যান্ডিং), F-35B (উলম্ব অবতরণ সক্ষম), এবং F-35C (বিমানবাহী রণতরীর জন্য নকশা করা)। প্রতিটি বিমানের দাম কমপক্ষে ১০১.৫ মিলিয়ন ডলার।
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে এফ–৩৫ কেনার আগ্রহ দেখিয়ে আসছে। ট্রাম্প ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, রিয়াদ ‘অনেক’ যুদ্ধবিমান চাইছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, তারা ৪৮টি জেট কিনতে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে পারে।
এর আগে মে মাসে ট্রাম্প সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেন—যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অস্ত্রচুক্তি। এতে সৌদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বহু শীর্ষ প্রতিরক্ষা কোম্পানির সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম ও সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সে সময় ট্রাম্প বলেন, তার ‘দৃঢ় আশা, ইচ্ছা এবং এমনকি স্বপ্ন হলো সৌদি আরব আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দেবে।’
সৌদি আরব জানিয়েছে, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা পেলে তবেই তারা আব্রাহাম অ্যাকর্ডসে যোগ দেবে।
বুধবার ওয়াশিংটনের কেনেডি সেন্টারে ইউএস–সৌদি বিজনেস কাউন্সিলের বৈঠকে অংশ নেবেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বহু বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যার অনুমোদন দেওয়ার পর এটি তার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।