
ইবি প্রতিনিধি:
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, প্রক্টর সহ শিক্ষক আহত, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফের আন্দোলন, শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদের বিক্ষোভ মিছিল সাধারণ শিক্ষার্থীদের, স্বীকারোক্তি মনঃপুত না হওয়ায় আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে অবরোধ করে রাখা, শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় শাখা ছাত্রদলের প্রতিবাদ-সহ দিনভর উত্তেজনায় কেটেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। এতে আতঙ্কে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে ছোট্ট ক্যাম্পাসে অর্থাৎ ১৭৫ একর ক্যাম্পাসে ১৭৬ আন্দোলন হয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
১ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে আজ (২ ফেব্রুয়ারি) এমন ঘটনার সাক্ষী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দফায় দফা সংঘর্ষে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।
কুষ্টিয়া শহর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার বাসে (সানন্দা) ক্যাম্পাসের উদ্দেশে ছেড়ে আসে ডাবল ডেকার বাসটি। ওই বাসে থাকা আল-ফিকহ অ্যান্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাদের বন্ধুদের জন্য দৃশ্যমান বাস-ধরার চিহ্ন দিয়ে দুটি সিট ধরে। পরে আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সুমন অভ্র বাসে উঠে বাস-ধরার চিহ্ন সরিয়ে ওই সিটে বসে। এ নিয়ে সুমনের সঙ্গে তাদের তর্কাতর্কি বাঁধে।
পরে আল-ফিকহের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সিহাব ও রাকিব সুমনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মাঝে হাতাহাতি হয়। আঘাত লাগে সুমনের মুখে। তাৎক্ষণিক বিষয়টি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সমুন প্রক্টরকে অবহিত করেন।
এদিকে সুমন বিষয়টি তার বিভাগের বন্ধুদের জানালে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে গাড়ি আটকায়। এ সময় তারা বাসের সামনের গ্লাস ভাঙচুর করে। পরে আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরাও সেখানে আসে। উত্তেজনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সমাধানের জন্য রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি উভয়পক্ষকের শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এ সময় উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনুষদ ভবনের সামনে সামনে অপেক্ষা করেন।
প্রক্টরিয়াল বডির আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলে প্রক্টর বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানায়৷ ঘোষণা দেওয়ার সময় চলে যাওয়ার সময় আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ‘সন্ত্রাসী’ বললে অনুষদ ভবনের সামনে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামানকে ধাক্কা দেয়। আল-ফিকহ বিভাগের শিক্ষার্থীরারা প্রতিবাদ করলে ঝাল চত্ত্বরে উভয়পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় মারামারি হয়। এতে উভয়পক্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়।
শিক্ষার্থীদের বাগবিতণ্ডা থামাতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, উপস্থিত অন্যান্য শিক্ষক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারাও আহত হন। পরে আহতদের উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। সেখানে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এদিকে আজ রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রক্টর সহ শিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবি সমন্বয়ক এস এম সুইট ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে দাবি জানান।
একই ঘটনার প্রেক্ষিতে আইন ও আল ফিকহ বিভাগের মারামারির ঘটনায় বক্তব্য মনঃপুত না হওয়ায় নিজেদের বিভাগেরই এক শিক্ষার্থীকে অবরুদ্ধ করেছে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। দুপুরে ওই শিক্ষার্থী বিভাগের সেমিস্টার পরীক্ষার ভাইভা দিতে গেলে তাকে আটকে রাখে অন্য শিক্ষার্থীরা। আটকে রাখা ওই শিক্ষার্থীর নাম রাশেদুল ইসলাম রাশেদ। সে আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তবে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুন বলেন, আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি দুই বিভাগের ঘটে যাওয়া ঘটনায় ওই শিক্ষার্থী (রাশেদ) মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছে। ফলে তার নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় আমাদের তত্ত্বাবধানে রেখেছিলাম।
অপরদিকে বরাদ্দকৃত শ্রেণিকক্ষ বুঝে পেতে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আজ দুপুর বারোটার দিকে প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরবর্তী কর্মদিবসের মধ্যে তাদের শ্রেণিকক্ষ বুঝিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলে বিকাল চারটার দিকে তারা তাদের কর্মসূচি তুলে নেন।
আজ দুই পক্ষের সংঘর্ষে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়েছে শাখা ছাত্রদল। সংগঠনটির সদস্য রাফিজ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়।
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, গত ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং রাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে সিট ধরাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ ও আল ফিকহ্ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উক্ত সংঘর্ষ মীমাংসা করতে গেলে মীমাংসা শেষে দুই গ্রুপের মধ্যে পুনরায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং পুনরায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। উক্ত ঘটনার জের ধরে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের শিক্ষক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুজ্জামান এবং আল-হাদিস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এর উপর চড়াও হলে তাঁরা দুজনেই আহত হন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল-এর আহ্বায়ক মোঃ সাহেদ আহম্মেদ এবং সদস্য সচিব মোঃ মাসুদ রুমী মিথুন এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় জড়িত দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানান।
সবশেষে সংঘর্ষের ঘটনায় ন্যায্যতা ফিরিয়ে পাননি বলে সংবাদ সম্মেলন করেন আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, জুনিয়র শিক্ষার্থী কর্তৃক সিনিয়র শিক্ষার্থির উপর হামলার পর পরবর্তিতে ঘটে যাওয়া মারধর ও আক্রমণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার অবিলম্বে নিশ্চিত করতে হবে, গতরাতে বাস ভাংচুরের ঘটনার সাথে আইনের শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল কিন্তু এই ঘটনার সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবে জড়িত নয়। আমরা আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং জড়িতদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি ও আইন বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থী ইশমামকে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আমাদের ন্যায্য দাবিকে কুচক্রি মহল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। আমরা এই ট্যাগিং রাজনীতির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এর প্রেক্ষিতে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস, হল ও মেসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, বাসে সিট ধরা থেকে শুরু করে ভাংচুর ও আহতদের সুষ্ঠু তদন্তে কমিটির প্রস্তাব করেছি। আগামী মঙ্গলবারে জানা যাবে কে কে দায়িত্বে থাকতেছে।