ফটিকছড়িতে এনামের মৃত্যু: ৮ দিন পর ময়নাতদন্তে মিলল হত্যার প্রমাণ, মামলা দায়ের

রকিবুল হক শাকিল, ফটিকছড়ি
চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে মো. এনামুল হক এনাম (৪৮)-এর মৃত্যু প্রথমে ‘রহস্যজনক’ বলে মনে হলেও, ঘটনার ৮ দিন পর পাওয়া ময়নাতদন্ত রিপোর্টে এটি হত্যাকাণ্ড বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। এই তথ্য প্রকাশের পর এলাকায় তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১৯ জুলাই বিকেলে নাজিরহাট পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বি.এ. সুলতান মাস্টার বাড়ির পুকুরে ভেসে ওঠে এনামের মরদেহ। পুকুরপাড়ে পাওয়া যায় তার ব্যাগ, লুঙ্গি ও জুতা। ঘটনাটি মুহূর্তেই স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন তোলে—এটি কি নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?
প্রতিবেশীরা জানান, দৃষ্টিশক্তিহীন এনাম প্রায়ই পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হতেন। বিশেষ করে ছেলে মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে অবহেলা ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর উত্তেজিত এলাকাবাসী মোবারককে আটক করে পুলিশে আদালতে সোপর্দ করে।
মোবারকের দাবি, তিনি বাবাকে ছোট বোনের বাড়ি থেকে এনে রাত ১টা ৪৫ মিনিটে ঘরে রেখে তালা দেন। এর অল্প সময় পর কেউ তাকে পাশের ঝর্ণার কাছে দেখতে পায়। পরে তিনি অভিযোগ করেন এনামকে এলাকাবাসী হত্যা করেছে, তবে কারও নাম উল্লেখ করেননি।
অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ কেউ মোবারকের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, তিনি বাবার চিকিৎসায় প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন এবং এমনকি তাকে হজেও পাঠিয়েছেন। তাদের প্রশ্ন যে ছেলে এত খরচ করেছে, সে কি সত্যিই বাবাকে হত্যা করতে পারে?”
তবে অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়ে গেছে— পুকুরপাড়ে ব্যাগ, লুঙ্গি ও জুতা এত গুছিয়ে রাখা হলো কেন?
তালাবদ্ধ ঘর থেকে এনাম কীভাবে বাইরে এলেন? অন্ধ এনাম কি একা বাইরে যেতে সক্ষম ছিলেন?
তৃতীয় কোনো পক্ষ এতে জড়িত কি না?
ফটিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুর আহমদ জানিয়েছেন, “ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী এনামের মৃত্যু স্রেফ পানিতে ডুবে যাওয়া নয়; এটি হত্যাকাণ্ড। আমরা ইতিমধ্যে বহুমুখী তদন্ত শুরু করেছি।
ওসি আরও বলেন, “গতকাল রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নিহতের স্ত্রী ও মেয়েকে বাদী হয়ে মামলা করার জন্য বলা হয়েছিল, তবে তারা মামলা করেননি। পরবর্তীতে নিহতের বোন রেজিয়া বেগম বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।”