শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

নিরাপত্তা জনিত কারণে করিডোর বন্ধ, চরম দুর্দশায় সীমান্তের মানুষ

মোহাম্মদ তোফাইল, টেকনাফ
দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার শাহ পরীর দ্বীপ করিডোর। এর ফলে সীমান্ত বাণিজ্য কার্যত থমকে গেছে এবং বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় শত শত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দিনমজুর। প্রতিদিনের আয়ের পথ হারিয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় শাহ পরীর দ্বীপ করিডোর দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি ছিল। বৈধ ও সীমিত বাণিজ্যের আওতায় এ পথ দিয়ে গরু-মহিষ আমদানি, কৃষিপণ্য ও মাছ রপ্তানি এবং নিত্যপণ্য পরিবহন হতো। এতে হাজারো মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
প্রশাসনের ভাষ্যমতে, নিরাপত্তাজনিত কারণে ২০২১ সালে করিডোর বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, দেশের বড় খামার মালিকদের স্বার্থরক্ষার জন্যও করিডোর বন্ধের পেছনে চাপ ছিল।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শরিফ মেম্বার বলেন, “২০২১ সালে সরকার করিডোর বন্ধ করে দেয়। বলা হয় নিরাপত্তার জন্য, কিন্তু বড় বড় খামার মালিকরা মামলা করেছিল, তাদের গরু-মহিষ বিক্রি না হওয়ায়। বন্ধের পর অনেক ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, অনেকের টাকা আটকে আছে। আগে শত শত গরু-মহিষ আমদানি করতাম, এখন সব বন্ধ।”
শ্রমিক আবুল কাশেমের কণ্ঠেও হতাশার সুর “প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা আয় হতো। এখন সকাল থেকে বেকার বসে থাকতে হয়।”
বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে পুঁজি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছেন, আবার কেউ কেউ ঋণের দায়ে জর্জরিত।
জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন,“করিডোর পুনরায় চালুর বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে কবে নাগাদ এটি খুলে দেওয়া হবে তা নিশ্চিত নয়।”
প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান,
“নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনুকূল হলেই করিডোর খোলার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।”
অর্থনীতিবিদ ও স্থানীয় বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত নিরাপত্তা বজায় রাখা অবশ্যই জরুরি। তবে করিডোর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা পুরোপুরি ধসে পড়বে। তাদের প্রস্তাব—নিরাপত্তা নিশ্চিত রেখে সীমিত পরিসরে বাণিজ্য চালু করা যেতে পারে।
করিডোর পুনরায় চালুর আগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। স্থানীয়রা বলছেন, সহায়তা না পেলে অনেক পরিবার দারিদ্র্যের গভীরে তলিয়ে যাবে।

সর্বাধিক পঠিত