শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

অনুমতি দিয়েই দখলের সুযোগ, পরে উচ্ছেদ নাটক

‎চিটাগং ট্রিবিউন ডেস্ক
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি দখল করে রাতারাতি দোকান বসানো নিয়ে আবারও বিতর্কের ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে-যেখানে এসব স্থাপনার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন, সেখানে আবার সেই প্রশাসনই কেন উচ্ছেদ অভিযানে নামছে?
গেলো শুক্রবার রাত থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে একই নকশায় সারি সারি দোকান ঘর উঠতে দেখা যায়। নির্মাণকারীদের দাবি, তারা প্রশাসনের দেওয়া অনুমতিপত্র হাতে নিয়ে দোকান বসাচ্ছেন। তবে ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার মুখে রবিবার দুপুরে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে স্থাপনাগুলো সরানোর নির্দেশ দেন।
সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আজিম খান স্বীকার করেন, নির্মাণকারীদের কাছে প্রশাসনের অনুমতিপত্র রয়েছে। তবে তার ভাষায়, “সে অনুমতিতে শর্ত আছে প্রয়োজনে প্রশাসন তা বাতিল করতে পারবে।”
এদিকে দোকান বসানো এক ব্যবসায়ী বলেন, “গত বছরের ৫ আগস্টের আগেও এখানে অনেকে ব্যবসা করেছে। আমরা করলে সমস্যা কোথায়?”
জানা গেছে, গত এক বছরে জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল থেকে প্রায় ৩০০ দোকান বরাদ্দের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রভাবশালী ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপ সামলাতেই এসব অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাহেদুল আলম স্বীকার করেন, “আমরা বিব্রত। একদিকে অনুমতি দেওয়া, আবার রাতারাতি দখল হয়ে যাওয়া বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি।”
ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন “যদি অনুমতি বৈধ হয়, তবে স্থাপনাগুলো অবৈধ কেন? আর যদি অবৈধ হয়, তবে সেই অনুমতি কীভাবে দেওয়া হলো?”
হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ‘পরিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ)’— সেখানে কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা ব্যবসা চালানো যাবে না।
বাপার জেলা সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ বলেন, “আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন অনুমতি দিয়েছে- এটিই সাংঘর্ষিক। দায় নেবে কে?”
পরিবেশবাদী আইনজীবী মুজিবুল হক মনে করেন, “অনুমতি দেওয়া আদালতের আদেশ অমান্য করার সামিল।”
সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “বালিয়াড়ি হলো প্রাকৃতিকভাবে উপকূল রক্ষার প্রাচীর। এগুলো দখল হলে শুধু পরিবেশ নয়, পর্যটনশিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।”
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে অন্তত ২০০ অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “রাতের আঁধারে সৈকত দখল মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে অবৈধ স্থাপনা সরাবো।”
তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত তিনদিন ধরে রাতের আঁধারে দোকান বসছে কোনো বাধা ছাড়াই।
এর আগেও একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানের পর ফের দোকান বসে গেছে। এবারও সেই পুরনো চিত্রই ফিরেছে, তবে নতুন মাত্রা যোগ করেছে প্রশাসনের অনুমতি বিতরণ।
বাপার জেলা সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “যদি কঠোর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত হারাতে পারে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পর্যটনশিল্প পড়বে বড় ঝুঁকিতে।”

সর্বাধিক পঠিত