সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

নোয়াখালীতে কারাগারে বসে বিএনপি নেতা হুমকিতে আতঙ্কে প্রবাসী পরিবার

নোয়াখালী প্রতিনিধি 
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা সৌদি আরব প্রবাসী মহি উদ্দিনের দায়ের করা চাঁদাবাজির মামলায় বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের জসিমকে (৫৩) কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।শনিবার (১১ অক্টোবর) ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, কারাগার থেকে এই বিএনপি নেতা তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে ওই প্রবাসী পরিবারকে মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত চাপ প্রয়োগ করছে। হত্যার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে প্রবাসী পরিবারের নারী ও শিশুরা নিরাপত্তাহীনতা ভুগছেন।
এরআগে, গত সোমবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে নোয়াখালী জজকোর্টের ১নং আমলি আদালতে হাজির হয়ে জসিম জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আবদুল কাদের জসিম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ফখরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ও কবিরহাট উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উপজেলার বাটইয়া ইউনিয়নে সৌদি প্রবাসী মহি উদ্দিনের পরিবারের কাছে প্রভাব খাটিয়ে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে জসিম। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় প্রবাসী মহি উদ্দিন ও তার পরিবারের সদস্যদের গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে গত ১ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিএনপি নেতা জসিমের দুই সহযোগী প্রবাসীর বাড়ি থেকে চাঁদাবাজির ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই টাকা গ্রহণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে রাখে ভুক্তভোগী পরিবার।
এরপর বিএনপি নেতা জসিম বাকী ৮০ হাজার টাকা তার সহযোগীদের দিতে প্রবাসী পরিবারকে মুঠোফোনে চাপ প্রয়োগ করেন। গত ৭ মার্চ বিএনপি নেতা জসিমের চাঁদাবাজির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলা বিএনপি তাকে বাটাইয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহিত দেয়। পরে এ ঘটনায় প্রবাসী বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, জসিম কারাগার থেকেই সন্ত্রাসী চক্র নিয়ন্ত্রণ করছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে হত্যার হুমকি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার মতো অনেক অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রবাসী পরিবারকে পুনরায় অব্যাহত হুমকি ও হয়রানির চেষ্টা করছে জসিমের অনুসারীরা। জসিমের জামিন চাওয়ার খবরে প্রবাসী পরিবার ও স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নোয়াখালী পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন- পিবিআই’র পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, বিএনপি নেতা জসিম ও তার সহযোগী সহিদ উল্যাহ সুজন এবং জাহাঙ্গীর আলম পরস্পর যোগসাজশে জোরপূর্বক টাকা গ্রহণ, প্রাণে হত্যার হুমকি প্রদান, চাঁদা দাবী এবং দাবীকৃত চাঁদা আদায়ের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা এডভোকেট রবিউল হাসান পলাশ সাক্ষরিত একটি পত্রের মাধ্যমে কোনো তদন্ত ছাড়াই জসিমের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর ভাই এডভোকেট জামাল উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, আবদুল কাদের জসিম নোয়াখালী-৫ আসনের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত থেকে আসা বিএনপি নেতা ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী মো. ফখরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হওয়ায় ফখরুল ইসলাম অর্থ শক্তির প্রভাবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো এবং এডভোকেট জাকারিয়াকে দিয়ে জসিমের অব্যাহতির আদেশ প্রত্যাহার করায়। গত দুর্গাপূজা চলাকালীন সময় জসিম প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপে ফখরুল ইসলামের সাথে থাকে এবং স্লোগান দিতেও ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো কোনো ধরনের অর্থ শক্তির প্রভাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, তদন্ত করা হয়নি তবে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মিদের অনুরোধে বিএনপি নেতা জসিমের অব্যাহতি তুলে নেওয়া হয়। তবে তাকে বিচারক একটি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

সর্বাধিক পঠিত