সোমবার, ডিসেম্বর ১, ২০২৫

ঈদগাঁওয়ে স্বাস্থ্যসেবার হাহাকার: কবে আসবে সরকারি হাসপাতাল?

আনাছুল হক
কক্সবাজার জেলার নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলা। প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রায় সব দপ্তর চালু হলেও এখানকার মানুষ এখনও বঞ্চিত মৌলিক অধিকার—স্বাস্থ্যসেবা থেকে। কারণ, উপজেলা হয়েও ঈদগাঁওয়ে এখনো গড়ে ওঠেনি কোনো সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ফলে স্থানীয়দের ভরসা ইউনিয়ন পর্যায়ের ছোট ক্লিনিক, প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা কক্সবাজার সদর হাসপাতাল। এতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে সময়, অর্থ ও প্রাণ সবই ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
ঈদগাঁওর গ্রামাঞ্চল থেকে গুরুতর রোগী কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিতে হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় এখানেই এলাকায় নেই স্থায়ী অ্যাম্বুলেন্স সেবা। গভীর রাতে অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে মোটরসাইকেল বা সিএনজিতে করেই রোগী পরিবহন করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন (৪৫) বলেন,
আমার স্ত্রী প্রসববেদনায় ছটফট করছিল। অ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ভাড়ায় চালিত সিএনজিতে করে হাসপাতালে নিয়ে গেছি। রাস্তার ধাক্কায় অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
এমন অভিজ্ঞতা শুধু নুরুল আমিনের নয়, ঈদগাঁওর বহু পরিবারেরই বাস্তবতা এটি।
উপজেলা ঘোষণার প্রায় চার বছর পার হলেও স্বাস্থ্য খাতে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কর্মী ও ওষুধের সংকট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের তথ্যমতে, প্রতিদিন গড়ে ৩০–৪০ জন রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা না পেয়ে সদর হাসপাতালে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঈদগাঁও ব্লাড ডোনার সোসাইটির অ্যাডমিন রিফাত জানান, এখানে উপজেলা পর্যায়ে কোনো সরকারি হাসপাতাল নেই। ফলে উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারেন না, কেউ কেউ ধারদেনায় জড়াচ্ছেন।
দরগাপাড়ার রহিমা খাতুন বলেন, আমার ছেলের জ্বর উঠলে ডাক্তার বলল কক্সবাজার গিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। ভাড়া আর পরীক্ষার খরচ দিতে পারিনি।
এদিকে ঈদগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মঈনুদ্দীন মোর্শেদ জানান, বর্তমানে ঈদগাঁও ইউনিয়নের উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের বহির্বিভাগেই আপাতত উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা চালু রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তিনি বলেন, আমরা টিকা, ডেলিভারি ও জরুরি সেবা চালু রেখেছি, কিন্তু রোগী ভর্তি করানো সম্ভব হয় না। বাজেট ও অবকাঠামোগত ঘাটতির কারণে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাজ এখনো শুরু হয়নি।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় চিঠি পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন ও বাজেট এলে ভূমি অধিগ্রহণের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিটি উপজেলায় ৫০ শয্যার একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকা বাধ্যতামূলক। এটি না থাকলে মাতৃস্বাস্থ্য, টিকাদান ও জরুরি সেবা বিঘ্নিত হয়।
স্থানীয় জনসাধারণ ও সচেতন মহল দ্রুত ঈদগাঁওয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্থাপনের জোর দাবি জানিয়েছেন।

সর্বাধিক পঠিত