শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

আওয়ামী লীগ নেতার গাড়িতে ঘুরছেন বিএনপি নেতা

চিটাগং ট্রিবিউন ডেস্ক
রাজশাহী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারকে আওয়ামী লীগের এক নেতার ব্যক্তিগত গাড়িতে ঘুরতে দেখা গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ অনুযায়ী, গত ১১ জুন গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুরী ধামের সামনে একটি কালো রঙের প্রাইভেটকার থেকে নামেন বিশ্বনাথ সরকার, তার ভাতিজা অলোক সরকার আলো এবং সেন্টু সরকার নামের আরেক ব্যক্তি।
গাড়িটির মালিক গোদাগাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক ও সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা সুনন্দন দাস রতন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আলোচিত রতন স্থানীয়ভাবে রাজনীতিতেও সক্রিয়। তিনি সাবেক এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ এবং শ্রী শ্রী গৌরাঙ্গদেব ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য ছিলেন।
তবে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি তাকে ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। ঘটনার বিষয়ে গাড়িচালক ইসরাইল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, গাড়িটি রতনের মালিকানাধীন এবং তিনি ১১ জুন রাজশাহী শহর থেকে ওই তিনজনকে নিয়ে খেতুরী ধামে গিয়েছিলেন। যদিও এ বিষয়ে সুনন্দন দাস রতনের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের অভিযোগ, অব্যাহতির পর রতন এখন পুরো বোর্ড ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছেন। গত মার্চে তিনি ধামে (মন্দির) তালা লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন তার লোকজন পাঠিয়ে। এবার বিএনপি নেতাদের ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে।
তাদের অভিযোগ, বিশ্বনাথ সরকার বোর্ডকে জানিয়েছিলেন, ১৩ জুন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ধামে আসবেন। এই তথ্যকে ঘিরেই মিলনমেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। তবে পরে জানা যায়, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আগমনের পরিকল্পনাই ছিল না। তার নাম ভাঙিয়ে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বৈঠক আয়োজনের চেষ্টাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
স্থানীয় বিএনপিপন্থি সংগঠন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের নামে ওই ‘মিলনমেলা’ আয়োজনের কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা অনুষ্ঠিত হয়নি। সংগঠনটি পরে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে, অনুষ্ঠানের আগের দিন মাটিকাটা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এহসানুল কবির টুকু সেখানে গিয়ে সহদেব কুমার পান্না নামে এক ভক্তকে মারধর করেন এবং ধাম থেকে বের করে দেন, যার ফলে অনুষ্ঠান বাতিল হয়।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টুকু। তিনি দাবি করেন, কেন্দ্রীয় নেতার আগমনের খবরে প্রস্তুতি দেখতে তিনি ধামে যান এবং সেখানে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সহদেব কুমার পান্নাকে দেখতে পেয়ে তাকে বিএনপির আয়োজনে অংশ না নিতে বলেন। মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে, রোববার দুপুরে ধাম প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাস্টি বোর্ড হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কল্যাণ ফ্রন্টের অভিযোগকে ‘পুরোপুরি মিথ্যা’ বলে দাবি করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বোর্ডের সভাপতি বিদ্যুৎ নারায়ণ সরকার। সঙ্গে ছিলেন ট্রাস্টি সদস্য শ্যামাপদ স্যানাল, গণেশ চন্দ্র ঘোষ, রামকুমার সাহা, বাবু মণ্ডল বাবু ও রাজানাথ পাল।
তারা জানান, ১১ থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত ধামে অন্তত ৫০ জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। সেখানে কাউকে মারধরের সুযোগ ছিল না। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এমন কিছু দেখা যায়নি।
তারা আরও দাবি করেন, রতন ধামের ভেতর দিয়ে তার নিজস্ব জমিতে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করছিলেন, যা ব্যক্তিস্বার্থে ছিল। এ কারণেই তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর থেকেই তিনি বিশ্বনাথ সরকার ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য দেবাশিষ রায় মধুকে ব্যবহার করে বোর্ড ভাঙার ষড়যন্ত্র করছেন।
বিশ্বনাথ সরকার যদিও দাবি করেছেন, তিনি রতনকে চেনেন না এবং তার গাড়িতে চড়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন, তবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা দেবাশিষ রায় মধু বিষয়টি অস্বীকার করেননি।
তিনি বলেন, ‘এই ট্রাস্টি বোর্ডটি ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘনিষ্ঠদের দ্বারা গঠিত। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ইচ্ছানুযায়ী এটিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি।’

সর্বাধিক পঠিত