শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

বৃষ্টিতে ভিজে পরিক্ষা কেন্দ্রে সন্তান, বাইরে অপেক্ষায় বাবা-মা: এইচএসসি’র প্রথমদিনে অনুপস্থিত ২২৩ শিক্ষার্থী।

সিয়াম সোহেল
সকালটা ছিল ভারী মেঘলা। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে সন্তানদের হাত ধরে হাজির হন অভিভাবকরা। কারও চোখে উদ্বেগ, কারও মুখে প্রার্থনা। কারণ, আজ শুরু হয়েছে শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ২০২৫।
কক্সবাজার জেলায় প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিলেন ২২৩ জন পরীক্ষার্থী। জেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে এইচএসসি সাধারণ শাখায় ১৫৮ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষায় ৬১ জন এবং কারিগরি ও বিএম শাখায় ৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেননি।
এবার কক্সবাজার জেলার ৩৫টি কেন্দ্রে ১৬ হাজার ৬৫৩ জন পরীক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে প্রথম দিনের পরীক্ষা।
পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ। কেউ বললেন, প্রশ্ন তুলনামূলক সহজ ছিল। কেউ আবার জানালেন অপর্যাপ্ত প্রস্তুতির জন্য কিছুটা চিন্তায় ছিলেন।
আবেগ ছুঁয়ে যায় কেন্দ্রের বাইরের দৃশ্য। ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে বাবা, মায়ের ভিজে চোখে শুধু একটাই চাওয়া সন্তান যেন ভালো করে লিখে আসে। কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রের সামনে কথা হয় মমতাজ বেগমের সঙ্গে। তার মেয়ে প্রথমবারের মতো এইচএসসি দিচ্ছে। তিনি বলেন, “সারারাত ঘুমাইনি। আল্লাহর কাছে শুধু চাইছি সব ভালোয় ভালোয় হোক।”
এদিকে, কক্সবাজার মহিলা কলেজ কেন্দ্রের পরীক্ষা সচিব ও কলেজের উপাধ্যক্ষ মো. অহিদুল ইসলাম বলেন, “পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আমরা আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
পরীক্ষা শুরুর আগে জেলার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. সালাহ্ উদ্দিন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “নকল বা প্রশ্নপত্র ফাঁস এই বিষয়ে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। যদি কেউ অসদুপায় অবলম্বন করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
পরীক্ষার প্রথম দিন বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবে অনুপস্থিতির সংখ্যাটি শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের ভাবিয়ে তুলেছে।
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সবক’টি কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ, রয়েছে অতিরিক্ত নজরদারি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ প্রশাসন এবং শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেছেন।
শিক্ষাবিদরা মনে করছেন, শুধু প্রশ্নপত্রের মান নয়, পরীক্ষার পরিবেশ ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করাও এখন সময়ের দাবি। একজন অবিভাবক বলেন, “শুধু পাশ করলেই হবে না, ভালো মানুষ হতে হবে। এটাই তো পরীক্ষার বড় সার্থকতা।”

সর্বাধিক পঠিত