শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

ঈদগাঁও‌তে মরাগরু জবাই : নিরব ভূমিকায় প্রশাসন!

ঈদগাঁও প্রতিনিধি

কক্সবাজারের আলোচিত ঈদগাঁও উপজেলার গরুবাজার আড়তে মরাগরু জবাই করে তা উপজেলার বিভিন্ন মাংসের দোকানে সরবরাহ করে বি‌ক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

রোববার(২৫ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে ঈদগাঁও গরুবাজার আড়তের একটি দৃশ্য সন্দেহের জন্ম দেয় প্রতি‌বেদ‌কের। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় একটি সিএনজি করে জবাই করা একটি গরু তড়িঘড়ি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল! সিএনজির পিছু নেয় প্রতিবেদক।
এক পর্যায়ে সিএন‌জি‌টি মহাসড়কের কালিরছড়া এলাকায় থা‌মা‌নো হয়। সিএনজির মধ্যে থাকা দুজন কসাইয়ের সাথে কথা ব‌লে জানা যায় রামু উপ‌জেলার আব্দুল্লাহ্ নামে একজন গরুব্যাবসায়ী (যিনি ঈদগাঁও গরুবাজারের একজন আড়তদার) তার কথা মতো আড়‌তের এক‌টি রোগাক্রান্ত গরুজবাই করে রামু নি‌য়ে যাওয়া হ‌চ্ছে। তা‌দের আমতা আমতা কথার ধরন বুঝা গে‌লো গরু‌টি মৃতই ছি‌লো।

তখন আড়তদার আব্দুল্লা’র সা‌থে মু‌টো‌ফো‌নে যোগা‌যোগ হ‌লে তিনি আড়তে গরুজবাই করার বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং আরো বলেন “আড়তে কোনো ধরনের গরু জবাই হয়নি, হোক সেটা মৃত কিংবা জীবিত।”
অথচ সরজমিনে গিয়ে আড়ত থেকে গরুজবাই করে সিএন‌জি যো‌গে প‌রিবহন করার দৃশ্যটি ক্যামেরা বন্দী করেছেন এবং এর সুনির্দিষ্ট প্রমাণও রেখেছেন প্রতিবেদক।

গরুবাজারের পাশের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আড়‌তে প্রায় সময় রোগাক্রান্ত আর মারা যাওয়া গরুজবাই করা হয়। তা ভোর রা‌তে প্রশাস‌নের চোখ ফা‌ঁকি দি‌য়ে সি‌ন্ডি‌কেট ক‌রে বি‌ভিন্ন ম‌াং‌সের দোকা‌নে সরবরাহ করা হয়।

আড়‌তে মরা গরু জবাই ও বি‌ক্রির বিষয়টি ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত‌া মশিউর রহমানকে জানানো হলে তিনি প্রতি‌বেদক‌কে জানান, এ ধরনের কোনো অভিযোগ তিনি পাননি। যদি এমন ঘটনা সংগঠিত হয়ে থা‌কে এটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ এ এম খালেকুজ্জামান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে অবগত করলে অবশ্যই একটা ব্যবস্থা নেয়া যেতো। অসুস্থ গরু জবাইয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা বা ছাড়পত্র বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু গরুটি অসুস্থ ছিলো তাই ডাক্তারের পরামর্শ ও ছাড়পত্র নিয়ে জবাই করা জরুরি ছিলো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি একধরণের ঘোলাটে আকার ধারণ করছে। একপক্ষ বলছে গরুটি মৃত ছিলো আরেকপক্ষ বলছে গরুটি অসুস্থ ছিলো। অসুস্থ হলে ডাক্তারের ছাড়পত্র প্রয়োজন ছিলো যদিও মাংস বেপারীরা তা করেনি। এই বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয় স‌চেতন মহ‌লে দাবি, গরুর আড়ত ও মাংসের দোকানগুলোতে উপ‌জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিদপ্ত‌রের অভিযান ও নিয়মিত নজরদারি চালানো হোক। যাতে মরা ও রোগাক্রান্ত পশুর মাংস বাজারে না আসে এবং সাধারণ মানুষ প্রতারিত না হয়।

সর্বাধিক পঠিত