শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫

এল ক্লাসিকো: মাদ্রিদ – বার্সেলোনা

সন্নিবেশ নাথঃ

মেসি, রোনালদো, রামোস, ইনিয়েস্তাদের সময়কার এল ক্লাসিকোর জৌলুস গেল কয়েক মৌসুমে ফিকে হতে বসেছিল।  কিন্তু এই রোববার মধ্যরাতে মাদ্রিদের সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হতে যাওয়া এল ক্লাসিকো যেন সেই পুরোনো উত্তেজনা ফিরিয়ে আনতে চলেছে। 

মেসির বিদায়ের পর থেকে ধুঁকতে থাকা বার্সেলোনা, নতুন মৌসুমে যেন ফিনিক্স পাখির মত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বুড়িয়ে যাওয়া লেওয়ান্ডস্কি, অনিয়মিত রাফিনহা, ইনিগো সাথে কিশোর লামিন, কুবার্সিরা নিজেদের নিয়ে গেছেন অন্য এক উচ্চতায়। যার পেছনের কান্ডারী জার্মান ফুটবল মস্তিষ্ক হান্সি ফ্লিক।

কোচ জাভির ফেলে যাওয়া বার্সেলোনাতে যেন ফ্লিক জাদুর ছোঁয়া লাগিয়েছেন। একাডেমি থেকে তুলে আনছেন ক্যাসেডো, বার্নাল, মার্কিনদের মতো একে পর এক প্রতিভা। যারা প্রতি ম্যাচেই বার্সেলোনা সমর্থকদের মান রাখছেন। ১২ গোল করে লেওয়ান্ডস্কি এখনো লিগের শীর্ষ গোলদাতা এবং ৬ অ্যাসিস্ট দিয়ে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতা লামিন ইয়ামাল। যার ফলশ্রুতিতে এখন পর্যন্ত লা লিগায় ১০ ম্যাচ খেলে ৯ জয় এবং ১ হারে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে অবস্থান করছে বার্সেলোনা।

অন্যদিকে, ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে ভিড়িয়ে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে রিয়াল মাদ্রিদ। পয়েন্ট টেবিলে বার্সেলোনার পেছনে অবস্থান করলেও পয়েন্ট পার্থক্য মাত্র ৩। এই এল ক্লাসিকো জিতলে বার্সেলোনার সমান পয়েন্টে চলে আসবে মাদ্রিদ জয়েন্টরা। নিজেদের মাঠে খেলা হওয়াতে মাদ্রিদ সমর্থকদের কঠোর সমর্থন তাদের আরো অনুপ্রেরণা জোগাবে।

মাদ্রিদের বুড়ো মাস্টার আঞ্চেলোত্তি ভালো করে চেনেন তার প্রতিপক্ষকে। কিভাবে হান্সি ফ্লিকের “হাই লাইন” মেনে চলা রক্ষণভাগকে কচুকাটা করতে হয় তাও ভালোমতোই জানেন। আঞ্চেলোত্তির অস্ত্র ভান্ডারে এমবাপ্পে, ভিনিসিয়াস, বেলিংহামদের মতো অস্ত্রের সমাহার, যা দিয়ে বার্সার রক্ষণ দুর্গে ক্ষিপ্রতার সাথে আঘাত আনতে পারবে মাদ্রিদ। সাথে রয়েছে লুকা মদ্রিচ, মেন্ডি, রুডিগারদের মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়েরা। সব মিলিয়ে সদ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতা মাদ্রিদ যে কোনো অংশেই ছাড় দেবে না উড়তে থাকা বার্সেলোনাকে, তা আগে থেকেই বলে দেওয়া যায়।

নজর থাকবে কাদের উপর?

বিগত মৌসুমে খারাপ খেলার কারণে যে রাফিনহা, লেওয়ান্ডস্কিদের বিক্রির রব উঠেছিল, এখন তারাই প্রতি ম্যাচে একাধিক গোল অ্যাসিস্ট করছেন বার্সেলোনার। তাদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী লামিন ইয়ামাল তো একাই সামলে যাচ্ছেন মেসির ফেলে যাওয়া জায়গাটি। ইতিমধ্যেই তিনি ১০ ম্যাচ খেলে ৪ গোল এবং ৬ অ্যাসিস্ট করেছেন। অন্যদিকে লেওয়ান্ডস্কি করেছেন ১০ ম্যাচে ১২ গোল ও ২ অ্যাসিস্ট। সমান ম্যাচ খেলে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড রাফিনহার গোল সংখ্যা ৫ এবং অ্যাসিস্ট সংখ্যা ৭। ফরওয়ার্ড লাইনের এমন গোলের ফুলজুরিতে লা লিগায় বার্সেলোনা ১০ ম্যাচে গোল দিয়েছে ৩৩টি এবং হজম করেছে কেবল ১০টি। তবে, পেদ্রি থেকেও নজর সরবে না সমর্থকদের। তিনি যেভাবে জাদু দেখিয়ে চলেছেন, ইতিমধ্যেই তাকে কিংবদন্তি জাভি – ইনিয়েস্তার তার সাথে তুলনা করা শুরু করে দিয়েছেন সমর্থকরা।

প্রতিবারের মতো, এই মৌসুমেও দারুন ছন্দে রয়েছে মাদ্রিদের ভিনিসিয়াস, এমবাপ্পে, বেলিংহাম, ভালবার্দেরা। তবে, ভিনিসিয়াসের ছন্দে থাকাটা বেশি জরুরী। কারণ খুব শীঘ্রই নিজের প্রথম ব্যালন ডি’ওর ঝুলিতে তুলতে চলেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। এই মৌসুমে তার গোল ও অ্যাসিস্ট যথাক্রমে ৫টি এবং ৬টি। অন্যদিকে ৬ গোল করে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে রয়েছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পাশাপাশি গত মৌসুমে সেরা তরুন খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা ইংলিশ মিডফিল্ডার বেলিংহাম‌ও নজরের কেন্দ্র বিন্দুতে থাকবেন। আবার “সুপার সাব” অর্থাৎ বদলি হিসেবে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ তুর্কি এন্ড্রিক। তবে, আঞ্চেলোত্তির কপালে ভাঁজ ধরাতে পারে ফর্মের তুঙ্গে থাকা রদ্রিগো আর কার্ভাহালের অনুপস্থিতি।

দেখা যাবে না যাদের…

কাকতালীয় হলেও দুই দলের‌ই প্রধান গোলরক্ষক ইঞ্জুরিতে পড়েছেন। মাদ্রিদের কর্তোয়া এবং বার্সেলোনার স্টেগানের অনুপস্থিতি দুই দলেরই গোলবারকে অরক্ষিত করে তুলেছে। তাই, না চাইতেও দলের দ্বিতীয় গোলকিপার লুনিন(মাদ্রিদ) এবং পেনার(বার্সেলোনা) উপর ভরসা করতে হবে দুই দলকে। এর মাঝে, বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষেক হ‌ওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে পোলিশ গোলকিপার সেজনির।এছাড়াও ইনজুরির কারণে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের হারিয়েছে মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনা। মাদ্রিদের রদ্রিগো, কার্ভাহাল, আলাবা অপরদিকে বার্সেলোনার ক্রিস্টেনসেন, আরাউহো, ফেরানরা মিস করতে চলেছে এই উত্তেজনাপূর্ণ এল ক্লাসিকো।

মেসি-রোনালদোরা বিদায় নিয়েছে। লামিন-ভিনিসিয়াসদের এই ক্লাসিকো যুগের শুরু দেখে গৌরিপ্রসন্ন মজুমদারের “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা” গানের দুটি লাইন বলতে ইচ্ছে হয়— “একই সে বাগানে আজ, এসেছে নতুন কুড়ি, শুধু সেই সেদিনের মালী নেই”।

সর্বাধিক পঠিত