কক্সবাজারে বিএনপির মনোনয়ন জট, বৈঠকে নাম ঘোষণার সিগন্যাল নেই

সিয়াম সোহেল
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড় এখন সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে কক্সবাজারে। রাজনৈতিক অঙ্গনে যেন উৎসবের আমেজ ব্যানার, পোস্টার, গণসংযোগ আর সোশ্যাল মিডিয়ায় তৎপরতা। দলের দুর্দিনে যারা মাঠে ছিলেন, তারা এখন মনোনয়নের আশায় দিন গুনছেন।
সীমান্তের আলোচিত আসন: উখিয়া–টেকনাফ
সবচেয়ে আলোচিত ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আসন কক্সবাজার-৪ (উখিয়া–টেকনাফ)।
দলীয় রীতিতে এই আসনটি পরিচিত ‘লক্ষী আসন’ নামে। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রচলিত ধারণা, যে প্রার্থী এখানে জেতে, তার দলই সরকার গঠন করে।
এবার এই আসনে লড়াইটা আকর্ষণীয়। একদিকে চারবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ ও জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী দলের অভিজ্ঞ নেতৃত্বের প্রতিনিধি। অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক মো. আবদুল্লাহ, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় কার্যক্রমে বেশ সক্রিয়। এর পাশাপাশি নতুন করে আলোচনায় এসেছেন উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী, যিনি এবার গুলশান বৈঠকের আমন্ত্রিত তালিকায় ছিলেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “উখিয়া–টেকনাফ আসনটি শুধু সীমান্ত রাজনীতি নয়, এটি বিএনপির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের প্রজন্ম পরিবর্তনের ইঙ্গিতও বহন করছে।”
সদর থেকে দ্বীপ, চার আসনেই প্রাণচাঞ্চল্য
কক্সবাজার-৩ (সদর–রামু) আসনে সাবেক দুই সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল ও ইঞ্জিনিয়ার শহীদুজ্জামান রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে। দুজনেই স্থানীয়ভাবে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী–কুতুবদিয়া) আসনে আলোচনায় রয়েছেন সাবেক সাংসদ আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ এবং এটিএম নুরুল বশর। দু’জনই দ্বীপাঞ্চলের ভোট রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের পরিচিত মুখ।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া–পেকুয়া) আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ প্রার্থী হলে অন্য কেউ টিকিট চাইবেন না বলে দলীয় গুঞ্জন রয়েছে। তবে তার অনুপস্থিতিতে বিকল্প হিসেবে তার স্ত্রী ও সাবেক সাংসদ হাসিনা আহমেদের নামও রয়েছে আলোচনায়।
চট্টগ্রাম বিভাগে বৈঠক ও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা
রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলার ৩৬টি আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন, আর ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করার আহ্বান জানান।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঝিলংজা ইউনিয়নের সাবেক চেযারম্যান গিয়াস উদ্দিন জিকু। তিনি জানান,“বৈঠকে কোনো ধরনের সিগন্যাল বা নাম ঘোষণা করা হয়নি। তবে তারেক রহমান স্পষ্টভাবে বলেছেন, দলের ৩১ দফা বাস্তবায়ন এবং ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই এখন মূল লক্ষ্য।” দলীয় সূত্রও বলছে, এবার নবীন-প্রবীণ, মাঠে থাকা ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।
কক্সবাজারে বিএনপির মনোনয়ন দৌড় এখন শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা নয়, এটি একদিকে দলের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব পুনর্গঠনের ইঙ্গিত, অন্যদিকে সীমান্ত ও উপকূলীয় রাজনীতিতে দলের শক্তি পুনরায় মজবুত করার প্রচেষ্টা।
উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার দ্বীপ, চকরিয়া-পেকুয়ার মূল ভূখণ্ড সব এলাকার রাজনৈতিক সমীকরণ এবার জাতীয় রাজনীতির বড় চিত্রের সাথেও যুক্ত হয়ে গেছে।
বিএনপির অভ্যন্তরে এই আলোচনা তাই এখন স্পষ্ট মনোনয়ন নয়, ঐক্যই হতে যাচ্ছে দলের টিকে থাকার প্রধান শর্ত।