রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫

চকরিয়ায় ৯১টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ, প্রতিমার সাজসজ্জায় ব্যস্ত শিল্পীরা

চকরিয়া, প্রতিনিধি
কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় শারদীয় দুর্গোৎসবের চলছে আমেজ। মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলো হয়ে উঠছে অপরূপ। খড় আর কাদা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি শেষে এখন চলছে প্রলেপ ও রঙের কাজ। একই সঙ্গে শরতের দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে দিনরাত মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
আগামী কাল রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) চণ্ডীপাঠ শঙ্খের শব্দের উলুধ্বনিতে ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গাপূজা। তাই দেবীদুর্গাকে পরিপূর্ণ রূপ দিতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
গজে (হাতি) চড়ে দেবীদূর্গা আসছেন মর্তলোকে। এজন্য ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা গড়ার কারিগররা। আর সারাদেশের মতো শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব উদযাপনের আশায় চকরিয়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
পৌরসভার সৎসঙ্গ কেন্দ্রে প্রতিমা তৈরির শিল্পী সুশান্ত পাল জানান, রঙ তুলির কাজ শেষ করা হয়েছে। প্রতিমাগুলো মনোমুগ্ধকর ও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছি। দীর্ঘ ছয়মাসে ২৬টি প্রতিমার কাজ সম্পন্ন করছি।
তিনি আরও জানান, প্রতিমা তৈরির এ কাজ শুধু পেশা নয়, ধর্মীয় আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা থেকে করা হয়। সেই জন্য দুর্গা মাকে নিজের মায়ের মতো করেই গড়ি।
চকরিয়া সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কালী মন্দিরে পুরোহিত শিবু চক্রবর্তী বলেন, ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মাধ্যমে দুর্গোৎসবের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। মহালয়ায় দেবী দুর্গার ঘট বসানো হয়। ঘট বসানোর মাধ্যমে দেবী দুর্গা বেলতলায় অবস্থান নেন। অর্থাৎ কৈলাস (স্বর্গলোক) থেকে মর্ত্যে (বেলতলায়) আসবেন দেবী দুর্গা। এবার দেবী দুর্গার আসার বাহন হবে গজে (হাতি), যা শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হয়। আর বিদায় হবে দোলায় (পালকি) যা অশুভ লক্ষণ হিসেবে পরিচিত।
উপজেলার ৯১ মণ্ডপে যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন হবে। ৪৭টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৪৪ মণ্ডপে ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হতে চলছে। এর মধ্যে পৌরসভা ৭টি, উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে ৯টি, বরইতলী ৬টি, কৈয়ারবিল ৩টি, কাকারা ৩টি, চিরিংগা ১টি, পূর্ব বড় ভেওলা ২টি, ফাঁসিয়াখালী ৮টি, ডুলাহাজারা ৭ টি, খুটাখালী ১টি উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে পূজা উপলক্ষে সেনাবাহিনী, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) এএসপি অভিজিৎ দাশ বলেন, শারদীয় দুর্গোৎসবে পূজারীরা যাতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারে সেইজন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্নদলে বিভক্ত হয়ে সার্বক্ষনিক চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভার ৯১টি মণ্ডপ এবং মন্দিরে নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সজাগ দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত থাকবে। সেই লক্ষ্যে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুদ্দিন শাহীন।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি তপন কান্তি দাশ বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও চকরিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এলাকায় ৪৭টি মণ্ডপে প্রতিমা পূজা এবং ৪৪ মণ্ডপে ঘটপূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা কমিটি সরকারের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে। এছাড়া মন্দির কমিটিগুলোকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
এবারে পূজার নিরাপত্তায় জামায়াতে ইসলামী নেতৃবৃন্দ, বিএনপি ও যুবদল,ছাত্রদলসহ তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও এগিয়ে এসেছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, এবারে শারদীয় দুর্গা পূজায় নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের অপতৎপরতা ঠেকাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোতে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও জানান, পূজা চলাকালীন বিদ্যুৎ ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও অপ্রতিকর পরিস্থিতি এড়াতে তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান।
চকরিয়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে উৎসবের আমেজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। মণ্ডপ সাজানো, আলোকসজ্জা ও সাংস্কৃতিক আয়োজন নিয়েও চলছে জোর প্রস্তুতি। উপজেলা জুড়ে উৎসবের আবহে ব্যস্ততা যেমন বেড়েছে, তেমনি দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকা মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যও নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে এই দুর্গাপূজার মধ্য দিয়ে।##

সর্বাধিক পঠিত