শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

সাইফুজ্জামানের হাজার কোটি টাকা পাচারের স্বীকারোক্তি জাহাঙ্গীরের

চিটাগং ট্রিবিউন ডেস্ক

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তরধারী মো. জাহাঙ্গীর আলম ১৯৯৮ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে এবং পরবর্তীকালে এজিএম হিসেবে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী রূকমীলা জামানের প্রতিষ্ঠান আরামিটে কর্মরত ছিলেন।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম কালুরঘাট থেকে দুদক উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিমের অভিযানে গ্রেপ্তার হন তিনি। এ সময় জাবেদের ইস্যু করা ১১টি চেক দিয়ে ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা উত্তোলনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ টাকা, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ টাকা এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা তোলা হয়।

গ্রেপ্তারের পর আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আরামিট পিএলসির এজিএম জাহাঙ্গীর আলম চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দি দিয়েছেন। তার প্রদত্ত জবানবন্দিতে সাইফুজ্জামান ও তাঁর সহযোগী আব্দুল আজিজ, উৎপল পাল ও সৈয়দ কামরুজ্জামান সিন্ডিকেট কর্তৃক হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

চট্টগ্রাম আদালত ও দুদকসহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া জাবেদের কর্মচারী জাহাঙ্গীর আলমের সেই জবানবন্দিতে আত্মসাৎ ও পাচারের অভিনব কৌশলের বিবরণ মিলেছে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইতোমধ্যে জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করার পর আরামিট পিএলসির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ২ লাখ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এর আগে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর নানা অনিয়মের ২৩ বস্তা ডকুমেন্ট উদ্ধার হয়েছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার প্রক্রিয়ায় সাইফুজ্জামানের এজেন্ট হিসেবে কাজ করা আরামিট গ্রুপের এজিএম উৎপল পাল এবং আবদুল আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। যত দিন যাচ্ছে, অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র বেরিয়ে আসছে। এবার জবানবন্দিতেও অনেকখানি সত্যতা মিলেছে।

জাহাঙ্গীরের জবানবন্দিতে যা পাওয়া গেছে

আরামিট পিএলসি হতে দুদকের উদ্ধারকৃত ১ কোটি ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৩০ টাকার ব্যাখ্যা

জাহাঙ্গীরের কর্মচারী শাহ আলমের নিকট থেকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর আরামিট পিএলসির অফিস হতে উদ্ধারকৃত ৭৭ লাখ ৬ হাজার ৭৩০ টাকার মধ্যে ৬৭ লাখ টাকা আরামিট পিএলসির সিইও কনক কান্তি সেনের নির্দেশে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে আমার (জাহাঙ্গীরের) অফিস কক্ষে রক্ষিত অফিসের ভল্টে শাহ আলমের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল। অন্যদিকে, চেকে ‘Company & Legal Purpose’ উল্লেখ করে ১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয় বলে জবানবন্দিতে বেরিয়ে এসেছে।

ক্লাসিক ট্রেডিংসহ ভুয়া প্রতিষ্ঠানের ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার

জবানবন্দিতে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আরামিট গ্রুপের কর্মচারী জসিম উদ্দিনকে প্রগ্রেসিভ ট্রেডিংয়ের মালিক, মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরীকে রিলায়েবল ট্রেডিংয়ের মালিক, মিছবাহুল আলমকে মডেল ট্রেডিংয়ের মালিক, ফরমান উল্লাহ চৌধুরীকে ভিশন ট্রেডিংয়ের মালিক, কর্মচারী সৈয়দ কামরুজ্জামানের আত্মীয় নুরুল ইসলামকে ক্রিসেন্ট ট্রেডার্সের মালিক এবং শেখ ফোরকানকে ইমনেন্ট ট্রেডিংয়ের মালিক হিসেবে সাজিয়ে ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করা হয়। এসব ভুয়া ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে ইউসিবিএল-এর বিভিন্ন শাখায় ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। পরবর্তীতে এসব হিসাবের মাধ্যমে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করা হয় এবং তা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। পরে নগদে অর্থ উত্তোলন করে বিদেশে পাচার করা হয়। এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেন আরামিট পিএলসির সিওও সৈয়দ কামরুজ্জামান, এজিএম আব্দুল আজিজ এবং এজিএম উৎপল পাল।

২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর আলমকে আমদানিকারক ব্যবসায়ী এবং তাঁর স্ত্রীকে নমিনি দেখিয়ে ইউসিবিএল-এর স্টেশন রোড শাখায় ক্ল্যাসিক ট্রেডিং নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়। এই হিসাব খোলার সময় তাঁর স্বাক্ষর জোরপূর্বক নেওয়া হয়। হিসাব খোলার পর ব্যাংক থেকে ইস্যুকৃত পাঁচ থেকে ছয়টি চেক বইয়ে (প্রতিটি ৫০ পাতার) মোট ২৫০-৩০০টি খালি বা ব্ল্যাংক চেকের পাতায় তাঁর স্বাক্ষর নেওয়া হয় এবং এসব চেক বই পরবর্তীতে আব্দুল আজিজ নিজের হেফাজতে নিয়ে যান।

সর্বাধিক পঠিত